পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় 疊 8brQ হইয়াছেন। আজ আমরা তাহার রথ নিজেদের সাধ্য অনুসারে যে যেমন করিয়াই তৈরি করি না— কেহ বা বেশি মূল্যের উপাদান দিয়া, কেহ বা অল্প মূল্যের-চলিতে চলিতে কাহারও বা রথ পথের মধ্যেই ভাঙিয়া পড়ে, কাহারও বা বৎসরের পর বৎসর টি-কিয়া থাকে –কিন্তু আসল কথাটা এই যে শুভলগ্নে রথের সময় আসিয়াছে। কোন রথ কোন পর্যন্ত গিয়া পৌঁছিবে তাহ আগে থাকিতে হিসাব করিয়া বলিতে পারি না— কিন্তু আমাদের বড়েদিন আসিয়াছে — আমাদের সকলের চেয়ে যাহা মূল্যবান পদার্থ তাহা আজ আর কেবলমাত্র পুরোহিতের বিধি-নিষেধের আড়ালে ধূপ-দীপের ঘনঘোর বাম্পের মধ্যে গোপন থাকিবে না আজ বিশ্বের আলোকে আমাদের যিনি বরেণ্য তিনি বিশ্বের বরেণ্যরূপে সকলের কাছে গোচর হইবেন । তাহারই একটি রথ নির্মাণের কথা আজ আলোচনা করিয়াছি; ইহার পরিণাম কী তাহ নিশ্চয় জানি না, কিন্তু ইহার মধ্যে সকলের চেয়ে আনন্দের কথা এই যে, এই রথ বিশ্বের পথে চলিয়াছে, প্রকাশের পথে বাহির হইয়াছে,- সেই আনন্দের আবেগেই আমরা সকলে মিলিয়া জয়ধ্বনি করিয়া ইহার দড়ি ধরিতে ছুটয়াছি। কিন্তু আমি বেশ দেখিতে পাইতেছি র্যাহার কাজের লোক র্তাহারা এই সমস্ত ভাবের কথায় বিরক্ত হইয়া উঠিতেছেন। র্তাহারা বলিতেছেন হিন্দুবিশ্ববিদ্যালয় নাম ধরিয়া ষে জিনিসটা তৈরি হইয়া উঠিতেছে কাজের দিক দিয়া তাহাকে বিচার করিয়া দেখো । হিন্দু নাম দিলেই হিন্দুত্বের গৌরব হয় না, এবং বিশ্ববিদ্যালয় নামেই চারিদিকে বিশ্ববিদ্যার ফোয়ার খুলিয়া যায় না । বিদ্যার দৌড় এখনও আমাদের যতটা আছে তখনও তাহার চেয়ে ষে বেশি দূর হইবে এ পর্যন্ত তাহার তো কোনো প্রমাণ দেখি না ; তাহার পরে কমিটি ও নিয়মাবলীর শান-বাধানে মেজের কোন ছিদ্র দিয়া যে হিন্দুর হিন্দুত্ব শতদল বিকশিত হইয়া উঠিবে তাহাও অনুমান করা কঠিন। এ সম্বন্ধে আমার বক্তব্য এই যে, কুম্ভকার মূতি গড়িবার আরম্ভে কাদা লইয়া যে তালটা পাকায় সেটাকে দেখিয়া মাথায় হাত দিয়া বলিলে চলিবে না। একেবারেই এক মুহূর্তেই আমাদের মনের মতো কিছুই হইবে না। এ কথা বিশেষরূপে মনে রাখা দরকার যে, মনের মতে কিছু যে হয় না, তাহার প্রধান দোষ মনেরই, উপকরণের নহে । যে অক্ষম সে মনে করে সুযোগ পায় না বলিয়াই সে অক্ষম। কিন্তু বাহিরের সুযোগ যখন জোটে তখন সে দেখিতে পায় পূর্ণ শক্তিতে ইচ্ছা করিতে পারে না বলিয়াই সে অক্ষম । যাহার ইচ্ছার জোর আছে সে অল্প একটু স্বত্র পাইলেই নিজের ইচ্ছাকে সার্থক করিয়া তোলে। আমাদের হতভাগ্য দেশেই আমরা প্রতিদিন এই কথা শুনিতে পাই, এই জায়গাটাতে আমার মতের সঙ্গে মিলিল না অতএব আমি