পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ᎼᏬ রবীন্দ্র-রচনাবলী সহ করিয়া আপনার অত্যন্ত সুকুমার দেহ ও চিত্তকে কঠিন তপস্তায় সমর্পণ করিয়াছিলেন । এই সতী নিবেদিতাও দিনের পর দিন যে তপস্যা করিয়াছিলেন তাহার কঠোরতা অসহ ছিল –তিনিও অনেকদিন অর্ধাশন অনশন স্বীকার করিয়াছেন, তিনি গলির মধ্যে যে বাড়ির মধ্যে বাস করিতেন সেখানে বাতাসের অভাবে গ্রীষ্মের তাপে বাতনিত্ৰ হইয়া রাত কাটাইয়াছেন, তবু ডাক্তার ও বান্ধবদের সনির্বন্ধ অনুরোধেও সে বাড়ি পরিত্যাগ করেন নাই ; এবং আশৈশব তাহার সমস্ত সংস্কার ও অভ্যাসকে মুহূর্তে মুহূর্তে পীড়িত করিয়া তিনি প্রফুল্লচিত্তে দিন যাপন করিয়াছেন—ইহা যে সম্ভব হইয়াছে এবং এই সমস্ত স্বীকার করিয়াও শেষ পর্যস্ত র্তাহার তপস্যা ভঙ্গ হয় নাই তাহার একমাত্র কারণ, ভারতবর্ষের মঙ্গলের প্রতি র্তাহার প্রীতি একান্ত সত্য ছিল, তাহ মোহ ছিল না ; মানুষের মধ্যে যে শিব আছেন সেই শিবকেই এই সতী সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করিয়াছিলেন । এই মানুষের অন্তর-কৈলাসের শিবকেই যিনি আপন স্বামীরূপে লাভ করিতে চান তাহার সাধনার মতো এমন কঠিন সাধনা আর কার আছে ? • একদিন স্বয়ং মহেশ্বর ছদ্মবেশে তপঃপরায়ণা সতীর কাছে আসিয়া বলিয়াছিলেন, হে সাধবী, তুমি যাহার জন্য তপস্তা করিতেছ তিনি কি তোমার মতে রূপলীর এত কৃচ্ছ্বসাধনের যোগ্য ? তিনি ষে দরিদ্র, বুদ্ধ, বিরূপ, র্তাহার যে আচার অদ্ভুত । তপস্বিনী ক্রুদ্ধ হইয়া বলিয়াছিলেন, তুমি যাহা বলিতেছ সমস্তই সত্য হইতে পারে, তথাপি র্তাহারই মধ্যে আমার সমস্ত মন “ভাবৈকরস হুইয়া স্থির রহিয়াছে। শিবের মধ্যেই ষে সতীর মন ভাবের রস পাইয়াছে তিনি কি বাহিরের ধনধেীবন রূপ ও আচারের মধ্যে তৃপ্তি খুজিতে পারেন ? ভগিনী নিবেদিতার মন সেই অনন্তদুর্লভ মুগভীর ভাবের রসে চিরদিন পূর্ণ ছিল। এই জন্যই তিনি দরিত্রের মধ্যে ঈশ্বরকে দেখিতে পাইয়াছিলেন এবং বাহির হইতে যাহার রূপের অভাব দেখিয়া রুচিবিলাসীরা ঘৃণা করিয়া দূরে চলিয়া যায় তিনি র্তাহারই রূপে মুগ্ধ হইয় তাহারই কণ্ঠে নিজের অমর জীবনের শুভ্র বরমাল্য সমর্পণ করিয়াছিলেন । আমরা আমাদের চোখের সামনে সতীর এই যে তপস্ত দেখিলাম তাহাতে আমাদের বিশ্বাসের জড়তা যেন দূর করিয়া দেয়-যেন এই কথাটিকে নি:সংশয় সত্যরূপে জানিতে পারি যে মানুষের মধ্যে শিব আছেন, দরিত্রের জীর্ণকুটীরে এবং হীনবর্ণের উপেক্ষিত পল্লীর মধ্যেও তাহার দেবলোক প্রসারিত এবং যে ব্যক্তি সমস্ত দারিদ্র্য বিরূপতা ও কদাচারের বাহ আবরণ ভেদ করিয়া এই পরমৈশ্বর্ধময় পরমসুন্দরকে ভাবের দিব্য দৃষ্টিতে একবাব দেখিতে পাইয়াছেন তিনি মানুষের এই অন্তরতম আত্মাকে পুত্র হইতে