পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় الـ & S $ সে সুবিধাটি এই যে, এই অংশেই বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনভাবে ও স্বাভাবিকরূপে নিজেকে স্বষ্টি করিয়া তুলিতে পরিবে। তার একটা কারণ, এই অংশের শিক্ষা অনেকটা পরিমাণে বাজার-দরের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইবে। আমাদের অনেককেই ব্যবসার .খাতিরে জীবিকার দায়ে ডিগ্ৰী লইতেই হয়—কিন্তু সে পথ যাদের অগত্য বন্ধ কিংবা যার শিক্ষার জন্যই শিখিতে চাহিবে তারাই এই বাংলা বিভাগে আকৃষ্ট হইবে। শুধু তাই নয় যারা দায়ে পড়িয়া ডিগ্ৰী লইতেছে তারাও অবকাশমতো বাংলা ভাষার টানে এই বিভাগে আনাগোনা করিতে ছাড়িবে না। কারণ, দুদিন না যাইতেই দেখা যাইবে এই বিভাগেই আমাদের দেশের অধ্যাপকদের প্রতিভার বিকাশ হুইবে । এখন ধারা কেবল ইংরেজি শব্দের প্রতিশব ও নোটের ধুলা উড়াইয়া জ্বাধি লাগাইয়া দেন তারাই সেদিন ধারাবর্ষণে বাংলার তৃষিত চিত্ত জুড়াইয়া দিবেন। عبيهة এমনি করিয়া বাহ সজীব তাহা ক্রমে কলকে আচ্ছন্ন করিয়া নিজের স্বাভাবিক সফলতাকে প্রমাণ করিয়া তুলিবে । একদিন ইংরেজিশিক্ষিত বাঙালি নিজের ইংরেজি লেখার অভিমানে বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করিয়াছিল, কিন্তু কোথা হইতে নব বাংলাসাহিত্যের ছোটো একটি অঙ্কুর বাংলার হৃদয়ের ভিতর হইতে গজাইয়া উঠিল ;– তখন তার ক্ষুদ্রতাকে তার দুর্বলতাকে পরিহাস করা সহজ ছিল ; কিন্তু সে যে সজীব, ছোটো হইলেও উপেক্ষার সামগ্রী নয় ; আজ সে মাথা তুলিয়া বাঙালির ইংরেজি রচনাকে অবজ্ঞা করিবার সামর্থ্য লাভ করিয়াছে। অথচ বাংলা সাহিত্যের কোনো পরিচয় কোনো আদর রাজারে ছিল না—আমাদের মতো অধীন জাতির পক্ষে সেই প্রলোভনের অভাব কম অভাব নয়—বাহিরের সেই সমস্ত অনাদরকে গণ্য না করিয়া বিলাতি বাজারের যাচনদারের দৃষ্টির বাহিরে কেবলমাত্র নিজের প্রাণের আনন্দেই সে আজ পৃথিবীতে চিরপ্রতিষ্ঠা লাভের যোগ্য হইতেছে। এতদিন ধরিয়া আমাদের সাহিত্যিকেরা যদি ইংরেজি কপিৰুক নকল কৰিয়া আসিতেন তাহা হইলে জগতে যে প্রভূত আবর্জনার স্বষ্টি হইত তাহা কল্পনা করিলেও গায়ে কাটা দিয়া উঠে। এতদিন ধরিয়া ইংরেজি বিষ্ঠার যে কলটা চলিতেছে সেটাকে মিস্ত্রিখানার ষোগে বদল করা আমাদের সাধ্যায়ত্ত নহে। তার ছুটে কারণ আছে, এক, কলটা একটা বিশেষ ছাচে গড়, একেবারে গোড়া হইতে সে ছাচ বদল করা সোজা কথা নয়। দ্বিতীয়ত, এই ছাচের প্রতি ছাচ উপাসকদের ভক্তি এত সুদৃঢ় যে, আমরা স্কাশনাল কলেজই করি আর হিন্দু য়ুনিভার্সিটিই করি আমাদের মন কিছুতেই ওই ছাচের মুঠ হইতে মুক্তি পায় না। ইহার সংস্কারের একটিমাত্র উপায় আছে এই ছাচের পাশে একটা সজীব জিনিসকে অল্প একটু স্থান দেওয়া। তাছা হইলে সে তর্ক না করিয়া