পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢२8 রবীন্দ্র-রচনাবলী যদি পথের বৈচিত্র্য রুদ্ধ করি, যদি একই বাধা পথ থাকে, তাহলে অভিপ্রায়ের স্বাধীনতা থাকে না—তাহলে কলের চাকার মতো চলতে হয় । সেই কলের চাকার পধটাকে চাকার স্বকীয় পথ বলে গৌরব করার মতো অদ্ভুত প্রহসন আর জগতে নেই। আমাদের সাহিত্যে চিত্রে সমুদ্রপারের রাজপুত্র এসে cनौ८झ्झ । किरू जशऔरङ পৌছোয়নি। সেই জন্যেই আজও সংগীত জাগতে দেরি করছে। অথচ আমাদের জীবন জেগে উঠেছে। সেই জন্তে সংগীতের বেড়া টলমল করছে। এ কথা বলতে পারব না, আধুনিকের দল গান একেবারে বর্জন করেছে। কিন্তু তারা যে গান ব্যবহার করছে, যে গানে আনন্দ পাচ্ছে সে গান জাত-খোয়ানো গান। তার শুদ্ধাশুদ্ধ বিচার নেই। কীর্তনে বাউলে বৈঠকে মিলিয়ে যে জিনিস আজ তৈরি হয়ে উঠছে সে আচারভ্রষ্ট। তাকে ওস্তাদের দল নিন্দ করছে। তার মধ্যে নিন্দনীয়তা নিশ্চয়ই অনেক আছে । কিন্তু অনিন্দনীয়তাই যে সব চেয়ে বড়ো গুণ তা নয়। প্রাণশক্তি শিবের মতো অনেক বিষ হজম করে ফেলে। লোকের ভালো লাগছে, সবাই শুনতে চাচ্ছে, শুনতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে না,—এটা কম কথা নয়। অর্থাৎ গানের পঙ্গুতা ঘুচল, চলতে শুরু করল। প্রথম চালটা সর্বাঙ্গসুন্দর নয়, তার অনেক ভঙ্গি হাস্তকর এবং কুতী— কিন্তু সব চেয়ে আশার কথা যে, চলতে শুরু করেছে— সে বঁাধন মানছে না । প্রাণের সঙ্গে সম্বন্ধই যে তার সব চেয়ে বড়ো সম্বন্ধ, প্রথার সঙ্গে সম্বন্ধটা নয়, এই কথাটা এখনকার এই গানের গোলমেলে হাওয়ার মধ্যে বেজে উঠেছে। ওস্তাদের কারদানিতে আর তাকে বেঁধে রাখতে পারবে না । দ্বিজেন্দ্রলালের গানের সুরের মধ্যে ইংরেজি সুরের স্পর্শ লেগেছে বলে কেউ কেউ তাকে হিন্দুসংগীত থেকে বহিষ্কৃত করতে চান। যদি দ্বিজেন্দ্রলাল হিন্দুসংগীতে বিদেশী সোনার কাঠি ছুইয়ে থাকেন তবে সরস্বতী নিশ্চয়ই তাকে আশীৰ্বাদ করবেন। হিন্দুসংগীত বলে যদি কোনো পদার্থ থাকে তবে সে আপনার জাত বঁচিয়ে চলুক ; কারণ তার প্রাণ নেই, তার জাতই আছে। হিন্দুসংগীতের কোনো ভয় নেই—বিদেশের সংস্রবে সে আপনাকে বড়ো করেই পাবে চিত্তের সঙ্গে চিত্তের সংঘাত আজ লেগেছে—সেই সংঘাতে সত্য উজ্জল হবে না, নষ্টই হবে, এমন আশঙ্কা যে ভীরু করে, ষে মনে করে সত্যকে সে নিজের মাতামহীর জীর্ণ র্কাথা আড়াল করে ঘিরে রাখলে তবেই সত্য টি কে থাকবে, আজকের দিনে সে যত আস্ফালনই করুক তাকে পথ ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হবে। কারণ, সত্য হি দ্বর সত্য নয়, পলতেয় করে ফোট ফোটা পুথির বিধান খাইয়ে তাকে বাচিয়ে রাখতে হয় না ! চারদিক থেকে মাছুষের নাড়া খেলেই সে আপনার শক্তিকে প্রকাশ করতে পারে। ४७२९