পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qbペ রবীন্দ্র-রচনাবলী Q সংকীর্ণ গৰ্ত্তী কাটাইৱা যাওয়াকে উন্নতিশীলতা বা কোনো শীলতাই বলে না, তাহ একটা ব্যর্থবাক্য উচ্চারণ মাত্র। Q ভূতের বিশ্বাস পৃথিবীতে সকল জাতির মধ্যেই ব্যুনাধিক পরিমাণে আছে —যখন বলা যায় আমি এই ভূতের বিশ্বাসের কুসংস্কার কাটাইয়াছি তখন এমন কথা বলা হয় না যে আমি মকুন্তত্বের সংকীর্ণ গণ্ডী অতিক্রম করিয়াছি। তেমনি হিন্দুসমাজে যে কুসংস্কার প্রচলিত আছে যদি কোনো হিন্দু সে সংস্কার কাটাইয়া থাকেন তবে তাহাকে কুসংস্কারহীন হিন্দু বলিব, অহিন্দু বলিব না। কুসংস্কারই হিন্দুর স্থায়ী পরিচয় এমন অদ্ভূত কথা কোনোমতেই বলা চলে না। এ কথা আমাদিগকে স্বীকার করিতেই হুইবে, অন্ধসংস্কার মানুষের সকল জাতির মধ্যেই আছে কিন্তু বিধাতার রাজ্যে অন্ধসংস্কারের স্বভাবই এই যে তাহ নিত্য নহে ; বস্তুত এই জন্যই উন্নতিশীল হওয়া সম্ভব, এবং এই জন্তই আদি ব্রাহ্মসমাজের অথবা অন্য যে কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ যতই মৃঢ় ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন হই ন তৎসত্বেও আমরা উন্নতিশীল, কারণ, আমরাও মানুষ। তাই যদি না হইবে তবে পৃথিবীতে ধর্মসংস্কারকের মতো উন্মত্ত পাগল আর তো কেহই নাই । সত্যমেব জয়তে, এই বাণী বিশ্বচরাচরে কেবল হিন্দুসমাজেই অসত্য, বিশ্ববিধাতা কেবল এই হিন্দুসমাজেই পরাস্ত হইয়া হাল ছাড়িয়াছেন—অসাধারণ উন্নতিলাভ করিলেও এমন কথা বলিতে পারিব না। অতএব হিন্দুসমাজের প্রচলিত ভ্রম ও অন্ধসংস্কার বর্জন করার দ্বারাই যদি আমরা অহিন্দু হই তবে শিশু রাম কথা কহিতে শিখিলেই গম হইয়া যায় এ কথাটা বলা চলে। তাহাকে বালক রাম বা যুবক রাম বা সুবুদ্ধি রাম বল তাহাতে কোনো বাধা নাই কিন্তু তাহাকে রামই বলিব না এমন পণ করিলে মানুষের নিত্যই নূতন নামকরণ করিয়া চলিতে হয় । যাহারা আমার প্রবন্ধ ভালো করিয়া না পড়িয়াই বিচলিত হইয়া উঠিয়াছেন তাহদের ভাবখান এই যে, “তুমি আমাকে হিন্দু বলিতেছ তবেই তো বলা হইতেছে আমি পৌত্তলিক, আমি জাতিভেদ মানি আমি ইত্যাদি ইত্যাদি ; তুমি নিজের সম্বন্ধে এমন কথা বলিতে পার, কেননা, তুমি কুসংস্কারাপন্ন, তুমি সাধারণ বা নববিধান ব্রাহ্মসমাজের - নও, তোমার পিতা এমন কাজ করিয়াছেন, তিনি এমন কথা বলিয়াছেন ইত্যাদি ' ইত্যাদি ।” o | বস্তুত আমার পিতা যদি অত্যন্ত সংকীর্ণ সংস্কারের অস্থার প্রকৃতির লোক ছিলেন ইহাই প্রকৃত সত্য হয় তরে আমার পিতাকে আমি তো পিতারূপে ত্যাগ করিতে পারিব না। যদিও বা আমার কোনো একটা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় তাহা আমার ইচ্ছার মধ্যেও