পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ܔ ܠܹ ܠ এখানে অনেক ছাত্রছাত্রী আসেন, যা লাভ করবার হয়তো তা সম্পূর্ণই লাভ করেন, এখানকার আনন্দ-উৎসবে আনন্দিত হন, কিন্তু এখানে তাদের আশ্রমবাস অবশেষে একদিন সমাপ্ত হয়। কিন্তু আমি অনুভব করেছি, বীরেশ্বর কেবল এখানকার দান গ্রহণ করতে আসে নি, তার মনের মধ্যে অর্ঘ্য সঞ্চিত হয়ে উঠছিল, তার জীবনের নৈবেদ্য পরিপূর্ণ হয়ে উঠে এইখানকার বেদিমূলেই সমৰ্পিত হত। মৃত্যুর থালায় সেই নৈবেদ্যই কি এখানে সে চিরদিনের মতো রেখে গেল। অল্প কিছু দিনের জন্যে সংসারে আমরা আসি আর চলে যাই। বিশ্বব্যাপী মানবপ্রাণের যে জাল বােনা নিত্যই চলেছে তার মধ্যে ছােটােবড়ো একটি করে সূত্র আমরা জুড়ে দিই। তার মধ্যে অনেক আছে। বর্ণ যার স্নান, শক্তি যার দৃঢ় নয়। কিন্তু যে ভালো, যে ভালোবেসেছে, মানুষের ইতিহাসসৃষ্টির মধ্যে সে অলক্ষ্যেও। সার্থক হয়ে থাকে। পৃথিবীতে এমন অনেকে আছে এবং গেছে যাদের নাম জানি নে, মহাশিল্পীর শিল্পে চিরকালের জন্যে তারা কিছু রঙ লাগিয়ে গেছে। বীরেশ্বর তার সরলতা, তার নির্মলতা, তার সহমৃদয়তায় আমাদের মনে যে প্রীতির উদ্রেক করে গেছে। তারই দ্বারা তার জীবনের শাশ্বতমূল্য আমরা মৃত্যু অতিক্রম করেও অনুভব করি। জীবনকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে বিদ্রুপ করতে এসেছে মৃত্যু, এ কথা মনে নেয় না। বিশ্বের মধ্যে এত বড়ো নিরর্থকতার ব্যঙ্গ তো দেখতে পাই নে। জগৎকে তো দেখতে পাচ্ছি সে মহৎ সে সুন্দর। তার সেই মহত্ত্ব মৃত্যুকে পদে পদে মিথ্যা করে দিয়ে, অমঙ্গলকে মুহুর্তে মুহুর্তে বিলীন করে দিয়ে বিরাজ করে, নইলে সে যে থাকতেই পারত না। এই জগৎ নিতাই চলছে, কিন্তু আপনাকে তো হারাচ্ছে না। জগতের সেই স্থায়ী সত্যের দিকেই সে রয়ে গেছে, মহাকালের যাত্রাপথে ক্ষণকালের অতিথিরূপে এসে যে আমাদের স্নেহ আমাদের আশীর্বাদ নিয়ে গেছে। তাকে আমরা হারাই নি, তোমরা তার প্ৰিয়জন, আমরা তার গুরুজন--- এই কথাই আজ । অস্তরের সঙ্গে উপলব্ধি করি। প্রবাসী কার্তিক ১৩৪৪ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বঙ্কিমচন্দ্র কালের হাত থেকে আজ শতবার্ষিকের অভিবাদন গ্ৰহণ করেছেন। পৃথিবীর অধিকাংশ কীর্তিমানের খ্যাতি যে সংকীর্ণ ইতিহাসের প্রাঙ্গণ সীমার বাইরে স্থান পায় না। তিনি তার প্রাচীর অতিক্রম করে এসেছেন মহাকালের উদার অভ্যর্থনায় যেখানে মাটির প্রদীপের নয়। আকাশের। প্ৰায়েই দেখা যায় আধুনিক যুগ অকৃতজ্ঞ; পুরাতনের দানের মূল্য লাঘব করে সম্মানের দায়িত্ব থেকে সে নিস্কৃতি পেতে চায়- আশা করি সেই ক্ষণকালের স্পর্ধিত অশ্রদ্ধা পরাভূত করে বঙ্কিমচন্দ্ৰ বঙ্গসাহিত্যে তার চিরকালের অসংশয় অধিকারে অধিষ্ঠিত থাকবেন। ৩ আষাঢ় እ ©8(፩ | যুগান্তর SV)86 মৌলানা জিয়াউদ্দিন আজকের দিনে একটা কোনো অনুষ্ঠানের সাহায্যে জিয়াউদিনের অকস্মাৎ মৃত্যুতে আশ্রমবাসীদের কাছে বেদনা প্ৰকাশ করব, এ কথা ভাবতেও আমার কুষ্ঠাবোধ হচ্ছে। যে অনুভূতি নিয়ে আমরা একত্র হয়েছি তার মূলকথা কেবল কর্তব্যপালন নয়, এ অনুভূতি আরো অনেক গভীর। ।