পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ Σν রবীন্দ্র-রচনাবলী জীবনে পেয়েছেন কেশবচন্দ্র, সেই অমৃত তিনি বিশ্বজনকে নিবেদন করেছেন, সেই তীর প্রসাদ স্মরণ করে তীর আগামী বহু শতবার্ষিকীর প্রথম শতবার্ষিকীর দিনে সেই অমিতাযুকে আমাদের অভিবাদন জানাই। ১৩ পৌষ ১৩৪৫ রবীন্দ্রীভবন-সংগ্ৰহ আজকের এই অস্তোন্মুখ সূর্যের মতােই আমার হৃদয় আমার জীবনের পশ্চিম দিগন্তু থেকে তোমার প্রতি তার আশীর্বাদ বিকীর্ণ করছে। তোমার সঙ্গে আজ আমার এই মিলন আর-একদিনকার শুভ সম্মিলনের আলোকেই উদ্দীপ্ত হয়ে দেখা দিলে। সে কথা আজ তোমাকে জানিয়ে দেবার উপলক্ষ ঘটল বলে আমি আনন্দিত । তখন তোমার জন্ম হয় নি, আমি তখন বালক। একদা তোমার স্বর্গগত প্রপিতামহ বীরচন্দ্ৰ মাণিক্য তীর মন্ত্রীকে পাঠিয়ে দিলেন জোড়াসাঁকের বাড়িতে, কেবল আমাকে এই কথা জানাবার জন্যে যে তিনি আমাকে শ্রেষ্ঠ কবির সম্মান দিতে চান। দেশের কাছ থেকে এই আমি প্রথম সমােদর পেয়েছিলুম। প্রত্যাশা করি নি এবং এই বহুমানের যোগ্যতা লাভ করবার দিন তখন অনেক সুদূরে ছিল। তার পরে স্বাস্থের সন্ধানে কার্সিয়ঙে যাবার সময়ে আমাকে তীর সঙ্গে ডেকে নিয়েছিলেন। তিনি বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড়ো ছিলেন। কিন্তু আমার সঙ্গে সাহিত্য আলোচনা করিতেন প্রিয় বয়স্যের মতো। তার সংগীতের জ্ঞান অসাধারণ ছিল। কিন্তু আমার সেই ۷۔ ستمبر কঁচা বয়সের রচিত ছেলেমানূমি গান তিনি আদর করে শুনতেন, বোধ হয় তার মধ্যে ভাবী পরিণতির সম্ভাবনা প্রত্যাশা করে। এ যেন কোন অদৃশ্য রশ্মির লিপি অঙ্কিত হয়েছিল তীর কল্পনার পটে। আজ সকলের চেয়ে বিস্ময় লাগে এই কথা মনে করে যে, বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে মহারাজার মনে যে-সকল সংকল্প ছিল, আমাকে নিয়ে তিনি সে সম্বন্ধে পরামর্শ করিতেন এবং আমাকে সেই সাহিত্য অনুষ্ঠানের সহযোগী করবেন বলে প্রস্তাব করেছিলেন। তার অনতিকাল পরেই কলকাতায় ফিরে এসে তাঁর মৃত্যু হল; মনে ভাবলুম এই রাজবংশের সঙ্গে আমার সম্বন্ধসূত্র এইখানেই অকস্মাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কিন্তু তা যে হল না সেও আমার পক্ষে বিস্ময়কর। র্তার অভাবে ত্রিপুরায় আমার যে সীেহাদের আসন শূন্য হল মহারাজ রাধাকিশোর মাণিক্য অবিলম্বে আমাকে সেখানে আহবান করে নিলেন। তার কাছ থেকে যে অকৃত্রিম ও অস্তুরঙ্গ বন্ধুত্বের সমােদর পেয়েছিলুম তা দূর্লভ। আজ এ কথা গর্ব করে তোমাকে বলবার অধিকার আমার হয়েছে যে, ভারতবর্ষের যে কবি পৃথিবীতে সমাদৃত, তীকে তীর অনতিব্যক্ত খ্যাতির মুহূর্তে বন্ধুভাবে স্বীকার করে নেওয়াতে ত্রিপুরা রাজবংশ গৌরব লাভ করেছেন। তেমন গীেরব বর্তমান ভারতবর্ষের কোনো রাজকুল আজ পর্যন্ত পান নি। এই সম্মেলনের যে একটা ঐতিহাসিক মহাৰ্যতা আছে। আশা করি সে কথা তুমি উপলব্ধি করেছ। যে সংস্কৃতি, যে চিত্তোৎকর্ষ দেশের সকলের চেয়ে বড়ো মানসিক সম্পদ, একদা রাজারা তাকে রাজেশ্বর্যের প্রধান অঙ্গ বলে গণ্য করতেন, তোমার পিতামহেরা সে কথা মনে মনে জানতেন। এই সংস্কৃতির সূত্রেই তাদের সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ছিল, এবং সে সম্বন্ধ অত্যন্ত সত্য ছিল। আজ তোমার আগমনে সেদিনকার সুখস্মৃতির দক্ষিণ সমীরণ তুমি বহন করে এনেছ। আজ তুমি বর্তমান দিনকে সেই অতীতের অর্ঘ্য এনে দিয়েছ, এই উপলক্ষে তুমি আমার স্নিগ্ধ হৃদয়ের সেই দান গ্রহণ করে যা তোমার পিতামহদের অর্পণ করেছিলুম, আর গ্রহণ করো আমার সর্বািন্তঃকরণের আশীর্বাদ। আনন্দবাজার পত্রিকা ২৫ পৌষ ১৩৪৫