পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

N8O রবীন্দ্র-রচনাবলী শুনাই। সবটা আমি গান করি নাই। যতটা আমি সুর দিয়েছিলাম ততটা তীকে শুনিয়েছি। তিনি তাতে খুব প্ৰসন্ন হয়েছিলেন। আনন্দবাজার পত্রিকা R8 SK y O8 "সাহিত্যিকা’ ১৩৪৫ • মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী S মহাত্মাজী যখন দুই বৎসর পূর্বে এই আমেদাবাদে আপনাদের সহিত বাস করিতেছিলেন, তখন আমি একবার এই আশ্রমে আসিয়াছিলাম। তদবধি দিনের পর দিন ধরিয়া আমি সেই শুভদিনের প্রতীক্ষা করিতেছিলাম যে, কবে আবার মহাত্মার পদব্রজঃপূত আশ্রম দর্শন করিয়া কৃতাৰ্থ হইব। এতদিনে আমার বাসনা চরিতার্থ হইয়াছে দেখিয়া আমি আপনাকে ভাগ্যবান বলিয়া মনে করিতেছি। আজ মহাত্মাজী আপনাদের মধ্যে নাই, আপনারা তাঁহার অনুপস্থিতির অভাব বৃশ্চিকদংশনের মতো অনুভব করিতেছেন ইহা জানি এবং তােহা জানি বলিয়াই আমি সংক্ষেপে দু-চার কথা বলিব। আপনারা সকলে এই আশ্রমে স্বার্থবিলিদান করিয়া বাস করিতেছেন। আপনারা সত্য’ কী তাহা উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন। প্রবৃত্তিতে মানুষকে পশু করিয়া তোলে, নিবৃত্তিই দেবত্ব গঠনের সহায়ক, এই সত্য আপনারা প্ৰাণে প্ৰাণে অনুভব করিয়াছেন। ত্যাগ কাহাকে বলে? ত্যাগের অর্থ এই যে, মানুষের দেহটাই প্রকৃত জীবন নহে, আত্মাই প্রকৃত জীবন। পশুর সহিত এই যে পার্থিব জীবন আমরা যাপন করি, এই জড় জগৎই কেবল জগৎ নহে, কিন্তু আমাদের মধ্যে ইহাপেক্ষা আরও উচ্চতর যে জীবন লুক্কায়িত আছে, সেই জীবনের জন্য আরও উচ্চতর জগতের প্রয়োজন। আমাদের সেই লুক্কায়িত জীবন অবিনশ্বর— অমর, অক্ষয় ও অব্যয়। যে ব্যক্তি এই জড় জগতের স্বার্থকে জয় করিতে পারিয়াছে কেবল সেই-- ই সেই অমর জীবন উপভোগ করিতে পারে। প্রত্যেক মানুষকে ‘দ্বিজ’ হইতে হইবে, একবার দেহ লইয়া জন্ম গ্রহণ করিতে হইবে, আবার সত্যের আলোক লইয়া অমর জীবনের সন্ধান পাইয়া নূতন জন্ম লাভ করিতে হইবে। যাহারা আপনার মধ্যে অসীমকে উপভোগ করিতে পারে তাহারাই অমর হয়। তাহারাই জানে যে, জীবনের কখনো ধ্বংস হয় না। মুরগির ছানা যেমন ডিম ভাঙিয়া আলোক আনে, মানুষ তেমনি আলোকে আনিতে পারে— যদি সে স্বার্থের ডিম্ব ভাঙিতে পারে— মানুষ যতদিন হইতে বুঝিতে পারিয়াছে যে, এই জড় জগৎই চরম জগৎ নহে, সেইদিন হইতেই মানুষ এই শৃঙ্খল ভাঙিয়া নূতন জগতের সন্ধানে ফিরিতেছে। পৃথিবীর সমস্ত ধর্মই এই অমর জগতে লোককে লইবার জন্য নানাভাবে আলোক প্রদর্শন করিতেছে। সকল ধর্মেরই উদেশ্য কিন্তু অমর জগতের সন্ধান দেওয়া। সকল ধর্মই বলে ত্যাগের দ্বারা সেই অমর জগতে পৌঁছানো যায়। ত্যাগ যদি সত্য সত্য অবলম্বন করা হয় তবে তাহা অমর জগতে মানুষকে লইয়া যায়। এই ত্যাগ অবলম্বন করিতে গেলে কঠোর তপস্যা চাই। এই আশ্রমে আপনারা সেই তপস্যায় নিমগ্ন আছেন। আপনারা নিশ্চয়ই অমৃতলোকের অধিকারী হইবেন। মহাত্মাজী আজ। আপনাদের মধ্যে নাই, কিন্তু তাহার আত্মা আপনাদের মধ্যেই বিরাজ করিতেছে। মহাত্মাজী আত্মাকে বিশুদ্ধ করিতে বলিয়াছেন। এই আত্মশুদ্ধিতেই আপনাদের মুক্তি নিহিত। মহাত্মজীর বাণী শুধু আপনাদের মধ্যেই আবদ্ধ নাই, তাহা বিশ্বের সর্বত্র বিস্তুত