পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

24 S8S হইয়াছে। অতএব মহাত্মাকে বিশ্বকৰ্মা’ বলা যাইতে পারে। তিনিই অসীম, তাহার জ্যোতিঃ আজ সমগ্র বিশ্বে পরিব্যাপ্ত হইয়াছে। প্রতি বিশ্বমানবের হৃদয়ে মহাত্মার জন্য রত্নসিংহাসন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। যে অসীমময়, সে অসীমকে পায়। উপনিষদের ইহাই বাণী। তঁহাকে মনে ও বাক্যে জানিতে পারিলে বিশ্বকর্মকে জানা হয়। জীবনটিকে বিশ্বের হিতের জন্য উৎসর্গ করিতে পারিলে সেই বিশ্ববন্ধুকে ধরা যায়। আপনাদের আশ্রমশিক্ষাও এই আলোকদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত। ব্ৰহ্মা স্বয়ং ত্যাগ স্বীকার করিয়া এই ব্ৰহ্মাণ্ড সৃষ্টি করিয়াছিলেন। ত্যাগের দ্বারাই সৃষ্টি হয়— কখনাে ধ্বংস হয় না। আমরা এই সত্যটুকু হৃদয়ংগম করিতে পারিলে মহাত্মার হৃদয়ের সহিত আপন হৃদয় এক যোগসূত্রে বাঁধিতে পারিব এবং তখনই প্রকৃত মহাত্মার কর্মের অংশী বলিয়া গণ্য হইব। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা भाप &b^88 * NR আমাদের দেশের উপর সবচেয়ে বড়ো শত্রু প্ৰভুত্ব করিতেছে, তাহা হইতেছে অজ্ঞতা ও কুসংস্কার, জাতিভেদের গোঁড়ামি ও ধর্মের অন্ধতা। সমুদ্রপারের যে প্ৰভূত্ব বিদেশীদের মধ্য দিয়া আমাদের উপর শাসন করিতেছে, এই সমস্ত অজ্ঞতা ও সংস্কারের বিদ্বেষ তাহার অপেক্ষা অনেক বেশি কঠোরতর। এই সমস্ত অমঙ্গলের যতদিন মূলাচ্ছেদ না হইবে, ততদিন আমরা ভোটের অধিকার ও সুবিধা লাভের প্রত্যাশায় যতই বিবাদ করি।-না-কেন, প্রকৃত স্বাধীনতা আমরা কিছুতেই পাইব না। মহাত্মা গান্ধী আমাদিগকে এক নবতর জীবনের শক্তি এবং স্বাধীনতা লাভের এক দৃঢ়তর সংকল্পের সাহস দিয়াছেন— আজ সেই গান্ধীজীর জন্মতিথিতে আমাদিগকে এই কথাগুলিই স্মরণ রাখিতে হইবে। অবশ্য আমরা অনুভব করিতেছি যে, মহাত্মাজী তাহার ব্যক্তিগত নৈতিক জীবনের প্রচণ্ড শক্তির দ্বারা সমগ্র দেশের মধ্যে যে আন্দােলন সৃষ্টি করিয়াছেন এবং ঔদাসীন্য ও আত্মবিস্মৃতির পথ হইতে দুৰ্জয় সংকল্পের পথে টানিয়া আনিয়াছেন, তাহা একান্তভাবে তঁহারই সৃষ্ট আন্দােলন; তথাপি আমরা আশা করিতেছি যে, সমগ্ৰ জাতির নিদ্রিত মনের এই জাগরণের ফলে ভারতকে সমস্ত সামাজিক দুৰ্গতি হইতে উদ্ধারের জন্য সাহায্য করিবে এবং ভারতের পূর্ণতা লাভের পথে যে বাধা আছে, তাহা দূর হইয়া যাইবে। আনন্দবাজার পত্রিকা ১৬ আশ্বিন ১৩৩৮ আজ মৃত্যুর ভীষণ গভীর মহিমায় মহাত্মজীর জন্মদিন আমাদের সম্মুখে প্রতিভাত হইয়াছে। এই মৃত্যুর মহত্ত্ব তীহাকে জয়দান করিয়াছে। সাধারণত মানুষ গণ্ডিবদ্ধ পারিপার্শ্বিকের মধ্যে জন্মগ্রহণ করিয়া তাহার আত্মীয়স্বজনের সহিত গতানুগতিক সম্পর্ক রাখিয়া তাহার অতি সাধারণ জীবনযাত্রা নির্বাহ করে এবং তাহার পর একদিন সে মারা যায়। প্রত্যেক বৎসরেই জীবনের একটি বিশেষ দিন সে উপভোগ করে- সে দিনে সে তাহার অল্প কয়েকজন বন্ধু এবং