পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰবন্ধ Ꭹ8Ꮤ0 পর্যন্ত, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের বিঘ্ন, আমাদের স্বাধীনতা এবং ন্যায়পরায়ণতার পথের বাধা উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত অবিরাম সংগ্রাম করিয়া তিনি যদি তাঁহার ব্ৰত উদযাপন করিতে পারেন, তাহা হইলে তঁহার এবং আমাদের গৌরব মহত্তর হইবে। বন্ধুগণ, আপনাদের নিকট আমার এই আবেদন- আপনাদের দেশবাসী যাহারা যুগ যুগ ধরিয়া নীরবে অপমান সহা করিয়াছে, যাহারা মূকভাবে অত্যাচারকে মানিয়া লইয়াছে, দেবতাকে স্মরণ করিয়াও যাহারা কখনো ভৎসনা করে নাই, নিজেদের অদৃষ্টকে পর্যন্ত দােষ দেয় নাই, তাহাদের প্রতি গ্ৰীতি এবং ন্যায়বিচারের উদ্যম হইতে বিচ্যুত হইয়া আপনারা আপনাদের মহামানবের প্রতি, আপনাদের অন্তর্নিহিত মানবত্বের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। কিন্তু অবশেষে জাতির ভগবৎ-প্রেরিত অধিনায়কের ক্রুদ্ধস্বর আমাদের নিকট পৌঁছিয়াছে। তিনি এই সাবধানবাণী উচ্চারণ করিয়াছেন যে, যাহারা গর্বান্ধ হইয়া নিজের- আপনার জনের মধ্যে সামাজিক আদান-প্রদানের স্বাধীনতায় বাধা দেয়, তাহারা স্বাধীনতার মূলোচ্ছেদ করে। ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ ১৩ আশ্বিন ১৩৩৯ 8 বর্তমান যুগে আমাদের জন্মভূমিতে আমাদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের প্রধান যোগসূত্র হইতেছে মহাত্মা গান্ধী এবং গান্ধীজীকে আমাদের মহান ভ্রাতারূপে জাতির পক্ষ হইতে স্বীকার করিয়া লইবার দিন আজ আসিয়াছে। আমি আশা করি, আমরা আন্তরিকভাবে আমাদের এই মনোভাবকে প্রকাশ করিব। কিন্তু কেবলমাত্র উচ্ছাসপূর্ণ গর্ববােধকে প্রশ্রয় দিয়া এই শুভক্ষণের যথার্থ ভাবধারাকে আমরা যেন হান্ধা করিয়া না ফেলি। যখন মহাত্মা গান্ধী তঁহার দুঃখত্রত আরম্ভ করেন, তখন আমাদের দেশে এবং বিদেশে অনেক সংশয়বাদী তীহাকে বিদ্রপ এবং ঠাট্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু তথাপি আমাদের চক্ষের সম্মুখে এমন ঘটনা ঘটিল, যাহাতে যুগ-যুগাস্তের কুসংস্কার ও যুক্তিহীন বিধিনিষেধের কঠিন পাষাণ স্তুপ ভাঙিয়া চুরমার হইয়া গেল। এই সমস্ত বিধিনিষেধ ও কুসংস্কার আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বনাশ সাধন করিতেছিল। ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ আনন্দবাজার পত্রিকা ७ अभिन्न Ş७७३ ( এই ধরনের উৎসবাদিতে মন যখন ভাবাবেগে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে, মনের আবেগ প্রকাশ করিবার ভাষা যখন আমরা খুজিয়া পাই না, সেই সকল ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য দেশের আমদানি করা লম্বা লম্বা বক্তৃতা আমি মােটেই পছন্দ করি না। এই সকল ক্ষেত্রে বরং সময়ােপযোগী যে-সকল বৈদিক স্তবস্তোত্রাদি পবিত্রমনা ঋষিদের অস্তরের অন্তঃস্থল হইতে স্বতঃস্ফুর্ত হইয়াছে, মনোভাব জ্ঞাপনের জন্য প্রার্থনার আকারে ওইগুলি আবৃত্তি করা যাইতে পারে।