পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2Հ|* S86 উদ্ধারের চেষ্টা করিয়াছেন। উহাই তাঁহার সাধনা এবং মাতৃভূমির মারফত জগতের প্রতি উহাই তাহার শ্রেষ্ঠতম দান। ভারতের ইতিহাসের এই স্মরণীয় দিনে আমরা তাহার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা ও প্রেমাঞ্জলি অর্পণ করিতেছি আনন্দবাজার পত্রিকা × ५ याक्षिन् S७8७ br সময়ে জগতের শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষদের কার্যেরও দোষগুণের বিচার হয়, কিন্তু তীহাদের কার্যের পশ্চাতে যে ত্যাগ এবং প্রেরণা থাকে, তাহা লৌকিক বিচারের অতীত। মহাত্মা গান্ধীর কার্য সমগ্র জগৎবাসীর প্রশংসা লাভ করিয়াছে। কিন্তু যে প্রেরণা তাহার কার্যে শক্তি এবং প্ৰাণ সঞ্চার করিয়াছে আমাদের পক্ষে তাহা অনুভব করাই হইল বড়ো কথা। অকপটে, নিভীকভাবে এবং দূরপনেয় গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য আরোপ করিয়াছে। ঐতিহাসিক পরিস্থিতির পরিবর্তনে ভাবধারার পুনঃ পুনঃ সংস্কার অপরিহার্য। আবার রাজনীতি এবং সমাজনীতির ক্ষেত্রেও নূতন নূতন প্রথা ও প্রণালীর আমদানি করিয়া কৰ্মপন্থায় সজীবতা সম্পাদনও অত্যাবশ্যক। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী রাজনীতি ক্ষেত্রে সত্য ও অহিংসার যে নীতি আমদানি করিয়াছেন, তাহা স্থায়ী হইবে। যে যুগে সংঘবদ্ধ শঠতা এবং সরাসরি অসত্য প্রচারই হইল স্বাভাবিক প্রথা, সে যুগে মহাত্মা গান্ধীই কেবল রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনায় সততার নীতি অবলম্বন করিয়াছেন। প্রথম হইতেই তিনি চরিত্রের উৎকর্যের উপরই জোর দিয়া আসিতেছেন। রাজনৈতিক মতবাদের উপর কোনো গুরুত্ব আরোপ করেন নাই। বৃহত্তর জাতীয় সেবার ক্ষেত্রেও দেশবাসীর সহিত ব্যবহারে মহাত্মা গান্ধী সেই একই সত্যের পথ অনুসরণ করিতেছেন। আমাদের গ্রামবাসী এবং অত্যাচারিত শ্রেণীগুলির সম্পূর্ণ যোগ্যতা তিনিই সর্বপ্রথম স্বাকার করিয়াছেন এবং আমাদিগকেও স্বীকার করিতে বাধ্য করিয়াছেন যে, আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের ভিত্তি মুষ্টিমেয় কয়েকজন রাজনীতিকের উপর নহে, পরন্তু সমগ্ৰ দেশবাসীর উপরই প্রতিষ্ঠিত। আমার মনে পড়ে, কংগ্রেসের প্রথম আমলে পাবনাতে প্ৰাদেশিক সম্মেলনের সভাপতি হিসাবে আমি বলিয়াছিলাম যে, নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা গ্রামবাসীদের হাতেই থাকা উচিত। কিন্তু জনৈক সুবিখ্যাত নেতা (তাহার নাম প্রকাশ করা নিম্প্রয়োজন) আমার কথায় বিদ্বীপের হাসি হাসিয়াছিলেন; তখন আমাদের দৃষ্টি পশ্চিমাভিমুখী ছিল এবং দেশের শিক্ষিত ব্যক্তিদের একদল সর্বপ্রথমে প্রভূর মনস্তুষ্টি সাধনে নিযুক্ত ছিলেন এবং অপর দল ক্ৰোধাভরে শাসকবর্গের নিকট হইতে সকল অনুগ্রহ প্রত্যাখ্যান করিতেছিলেন। আজ সে অবস্থার পরিবর্তন হইয়াছে। এখন আমাদের দেশবাসীরা একজন মহাপ্ৰাণ ব্যক্তির প্রচারিত দেশপ্রেমের মধ্যেই তাহাদের নষ্ট মর্যাদা ফিরিয়া পাইয়াছে। সৃষ্টিশক্তির এক অফুরন্ত উৎসের সন্ধান পাওয়া ??ाgछ। ভিক্ষুকের বেশধারী এই মহাপ্ৰাণ ব্যক্তির জন্মতিথিতে তাঁহাকে অভিনন্দিত করিবার অধিকার আমাদের সকলেরই আছে। এই শুভ উপলক্ষে আমি আমাদের আশ্রমের পক্ষ হইতে র্তাহার প্রতি শান্তিনিকেতন ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ আনন্দবাজার পত্রিকা, ৫ আশ্বিন ১৩৪৫