পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ8\υ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি আশা করি যে, আমাদের আশ্রমে আপনাকে সংবর্ধিত করিবার সময় আমরা সংযত ভাষায় আপনাকে গ্ৰীতি নিবেদন করিতে পারিব এবং অনাবশ্যক শব্দ প্রয়োগ করিয়া ভাষাকে উচ্ছসিত হইয়া উঠিতে দিব না। মহাতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বভাবতই সরল ভাষাতেই ব্যক্ত হইয়া থাকে এবং আপনাকে আমরা যে আমাদের এবং বিশ্বমানবের স্বজন বলিয়া গ্রহণ করিতেছি, সেই কথা জানাইবার জন্য আপনাকে মাত্র এই কয়টি কথা বলিতেছি। বর্তমান মুহূর্তে এমন কতকগুলি সমস্যার সৃষ্টি হইয়াছে, যাহা আমাদের ভাগকে অন্ধকারাবৃত করিয়া তুলিয়াছে। আমরা জানি যে, এই সমস্ত সমস্যা দ্বারা আপনার পথও আচ্ছন্ন হইয়াছে এবং আমাদের মধ্যে কেহই ইহাদের আক্রমণ হইতে মুক্ত নহে। যাহা হউক, আমরা যেন ক্ষণিকের জন্যও এই কোলাহলের গণ্ডি অতিক্ৰম করিয়া আমাদের আদ্যকার এই সাক্ষাৎকারকে হৃদয়ের অনাড়ম্বর সাক্ষাৎকারের পরিণত করিতে পারি। আমাদের বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক আবর্তের যখন অবসান হইবে, তখনও আমাদের এই সাক্ষাৎকারের স্মৃতি জাগরূক থাকিবে এবং আমাদের সমস্ত সত্য প্রচেষ্টার শাশ্বত মূল্য উদঘাটিত হইবে। ¢ शॉन् S७8७ সু-সীমে সাধারণত একজাতি অন্যজাতির কাছে রাজদূত প্রেরণ করেন। তারা হন রাজনীতিবিদ; রাজনীতির এ-সকল ব্যবসাদাররা যান লাভের জন্য, অর্থের জন্য; তারা যে বন্ধন বাঁধেন। সে বাঁধন হচ্ছে রাজনীতির বাঁধন। কোনো জাতিই অন্য জাতির কাছে কবিদূত পাঠান না; কিন্তু আমি গিয়েছিলেম তোমাদের দেশে কবিদূত হয়ে ভারতবর্ষ আর চীনের মধ্যে সখের বাঁধন বঁধতে; লাভ নয়, অর্থ নয়, রাজ্য নয়, আমি চেয়েছিলাম প্রীতি। তোমরা আমাকে আদরে আত্মীয় বলে গ্রহণ করে নিয়েছিলে তার জন্যে আমি কৃতজ্ঞ। আমি যে যুরোপে যাশলাভ করেছি বা নোবেল পুরস্কার পেয়েছি তার জন্যে তোমরা আমাকে অভ্যর্থনা কর নি; তোমাদের একান্ত আত্মীয়রূপেই তোমরা আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিলে। তোমাদের দেশের সব জায়গাতেই আমি এই সহজ অভ্যর্থনা লাভ করেছিলেম। বহু প্রাচীন যুগ হতেই ভারতবর্ষ ও চীনের মধ্যে যে অতি নিবিড় সখের সম্বন্ধ ছিল আমি তোমাদের দেশে গিয়েছিলাম তাকেই নূতন করে জাগাতে। ঘটনাচক্রের আবর্তনে এই যোগসূত্রটি ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এ যোগসূত্র যাঁরা অতীতকালে একদিন বেঁধে দিয়েছিলেন তীর রাজনীতিক ছিলেন না- তঁদের পিছনে পিছনে অস্ত্ৰধারী সৈন্য ছিল না- তারা গিয়েছিলেন তাদের সাধনার সম্পদ নিয়ে। আমি তোমাদের দেশের নানা জায়গায় গুহা দেখেছি, যেখানে সে যুগের সাধকরা দিনের পর দিন সাধনায় কাটিয়েছিলেন। তোমাদের দেশে গিয়ে আমার যেন জন্ম-জন্মস্তরের স্মৃতি জেগে উঠেছিল, আমার মনে হয়েছিল যেন এই সাধকেরাই আমার মধ্যে নব জীবন লাভ করে এ যুগের কবিদূতরূপে তোমাদের কাছে আবার গিয়েছেন। তোমাদের সহজ গ্ৰীতির সেই সুন্দর অভ্যর্থনা আমি চিরদিন স্মরণ করে রাখব। বিশেষ করে তোমার কথা। আমার মনে পড়ে যেদিন তুমি আমার কাছে প্রথম এসেছিলে। একান্ত সহজ