পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাটক ও প্রহসন Ved না। এখন বেঁচে আছি। দেখেশুনে বেড়াবার মতো দেহের অবস্থা নয়, তাই তোমাদের কাছে খবর নিতে এলুম। নবগোপাল। সব চেয়ে বড়ো খবরটা এই যে, জামাইবাবু আমাদের কাশীর উপর আড়ি করে ব্যাসকাশী বানাতে বসেছেন। ঘোষালদিঘির পােনা সব তোলানো হয়ে গেল। ঘাটে একজোড়া পাল খেলাবার বিলিতি নীেকা— একটার গায়ে লেখা মধুমতী, আর-একটার গায়ে মধুকরী। রাজাবাহাদুরের তীবুর সামনে হলদে বনাতের উপর লাল রেশমে বোনা নাম লেখা মধুচক্র। ঘাটের উপরেই নিমগাছটার গায়ে কাঠের পাটায় লেখা মধূসাগর। কলকাতা থেকে ত্ৰিশটা মালী এসে লেগেছে এক রাত্তিরে বাগান বানিয়ে ফেলতে, যার নাম হয়েছে মধুকুঞ্জ। বাগানের সামনে লোহার গেট বসেছে, নিশেন উড়ছে, তাতে লেখা মধুপুরী। আর লাল-উর্দি পরা তকমাঝোলানো পাইক বীরকন্দাজ পায়ে পায়ে নুরনগরের বুকে বিলিতি বল্লমের খোঁচা দিয়ে দিয়ে bल(छ। বিপ্রদাস। ধৈর্য ধরতে হবে নবু। এই সেদিন মধুসূদন ফাঁকা খেতাব পেয়েছে রাজা, এখানে এসে সাধ মিটিয়ে ফাক রাজত্বের খেলা খেলে যেতে চায়। তাতে মনে মনে হাসতে চাও হেসো, কিন্তু দয়া কোরো, রাগ কোরো না। নবগোপাল। তুমি সহ্য করতে পার দাদা, কিন্তু প্ৰজারা সইতে পারছে না। তারা বলছে ওদের উপর টেক্কা দিতে হবে, তাতে যত টাকা লাগে লাগুক । বিপ্রদাস। নবু, আড়ম্বরে পাল্লা দেবার চেষ্টা, ওটা ইতরের কাজ। কী বল দেওয়ানজি? দেওয়ানজি। তোমার মুখেই এমন কথা শোভা পায় বড়োবাবু, আমাদের ছােটাে মুখে মানায় নবগোপাল। চতুর্মুখ তীর পা ঝাড়া দিয়েই বেশির ভাগ মানুষ গড়েছেন। কেবল বড়ো বড়ো কথা বলবার জন্যেই তার চারটি মুখ। পৃথিবীতে সাড়ে পনেরো আনা লোকই যে ইতর, তাদের কাছে সম্মান রাখতে হলে ইতরের রাস্তাই ধরতে হয়। বিপ্রদাস! তাতেও পেরে উঠবে না ভাই, তার চেয়ে সাত্ত্বিকভাবে কাজ সেরে নিই, সে দেখাবে ভালো। উপযুক্ত ব্রাহ্মণ পণ্ডিত আনিয়ে আমাদের সামবেদের মতে অনুষ্ঠান করা যাবে। ওরা রাজা হয়েছে, কারুক আড়ম্বর; আমরা ব্ৰাহ্মণ, পুণ্যকর্ম আমাদের। − নবগোপাল। দাদা, পাঁজি ভুলেছ, এটা সত্যযুগ নয়। জলের নীেকে চালাতে চাও পাকের উপর দিয়ে? মনে রেখে তোমার প্রজাদের কথা- ওই আছে তিনু সরকার তোমার তালুকদার, আছে ভাদু পরামানিক, কমরদ্দি বিশ্বেস, পঁচু মণ্ডল- এদের ঠাণ্ডা করতে চাও সামবেদের মন্ত্র আউড়িয়ে ? যাজ্ঞবন্ধ্যের নাম শুনলেই কি এদের গায়ে কীটা দিয়ে উঠবে ? এদের বুক যে ফেটে যাচ্ছে। তুমি যাও শুতে, মিথ্যে ভেবাে না। যা কর্তব্য আমরা তার কিছু বাকি রাখব না। [ নবগোপালের প্রস্থান কুমুর প্রবেশ কুমুদিনী। দাদা! বিপ্রদাস। কী কুমু! কুমুদিনী। এ-সব কী শুনছি। কিছুই বুঝতে পারছি নে। মুখে কাপড় দিয়ে কেঁদে উঠল। বিপ্ৰদাস। লোকের কথায় কান দিস নে বোন। কুমুদিনী। কিন্তু ওঁরা এ-সব কী করছেন? এতে কি তোমাদের মান থাকবে? বিপ্রদাস। ওদের দিকটাও ভেবে দেখিস। পূর্বপুরুষের জন্মস্থানে আসছে, ধুমধাম করবে না? বিয়ের ব্যাপার থেকে এটা স্বতন্ত্র করে দেখিস ।