পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাটক ও প্রহসন >9 。 কুমুদিনী! তুমি আমাকে অপমান করতে চাও, হার মানতে হবে। নেব না, তোমার অপমান মনের মধ্যে নেব না । মধুসূদন। তুমি.তোমার দাদার চেলা, কিন্তু জেনে রেখো, আমি তোমার সেই দাদার মহাজন। তাকে এক হাটে কিনে আর-এক হাটে বেচিতে পারি। কুমুদিনী। দেখো, নিষ্ঠুর হও তো হােয়ো, কিন্তু ছােটাে হােয়ে না। মধুসূদন। কী, আমি ছােটাে! আর তোমার দাদা আমার চেয়ে বড়ো! কুমুদিনী। তোমাকে বড়ো জেনেই তোমার দ্বারে এসেছি। মধুসূদন। বড়ো জেনেই এসেছ না বড়োমানুষ জেনেই টাকার লোভে এসেছ? কুমুদিনীর দ্রুত প্রস্থান যেয়ে না। রানী, ফিরে এসো। আমি বলছি ফিরে এসো। তৃতীয় দৃশ্য পরদিন সকালে মোতির মা ও কুমুদিনী মোতির মা। এত ভোর বেলায় আকাশে কার দিকে তাকিয়ে আছ ভাই? শোবে চলে। কুমুদিনী। আমার নিষ্ঠুর ঠাকুরের দিকে। তাকে আমি বলেছি, আমার বুক নিংড়িয়ে তুমি পুজো চাও, তাই দেব আমি, কিছুতেই হার মানব না, হার মানব না। মোতির মা। তোমার ঠাকুরই হার মানবেন, নিষ্ঠুরের আসন টলবে। কুমুদিনী। দুঃখকে আমি ভয় করি নে ভাই, দুঃখ আমার সওয়া আছে শিশুকাল থেকে। কিন্তু ঘূণা! যা অন্যায় যা অশুচি তার মধ্যে দিয়ে কেমন করে কী সত্ত্বনা পাব, আমার যে তা জানা নেই। দাদার কাছে মানুষ হয়েছি, তাই এই পথটা চেনবার দরকার হয় নি। কিন্তু ঘূণাও করব জয়, তার পরে আর আমার ভাবনা কিসের! মোতির মা। তোমার ঠাকুকে যে যত বেশি করে দেয় তার উপর তীর দাবি আরো যেন বেড়েই চলে, কিছুতে মেটে না তীর পাওনা। এর মানে কিন্তু আমরা বুঝতেই পারি নে। কুমুদিনী। ভক্তকে যাচাই করে নেন; তীর চরণতলে বসবার যোগ্য হতে হবে তো। মোতির মা। সত্যি করে বলি, রাগ করিস নে ভাই— পায়ের তলায় এমনি ক’রে দালন ক'রে তার পরে পায়ের তলায় বসবার যোগ্য করবেন ঠাকুর, তার মানে বুঝতে পারি নে আমরা। কুমুদিনী। আজ আমার কেবলই মনে হচ্ছে, ধ্রুবকে যেমন দেখা দিয়েছিলেন তেমনি করেই এখনি যদি নির্মল মূর্তিতে দেখা দেন, যদি সত্যি করে তীর পা ছুতে পারি, তবেই এ মলিন দেহ শুদ্ধ হয়, নইলে এই অশুচিকে বহন করে আমি আর পারছি নে, নিজের মধ্যে থেকে ছুটে বেরিয়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কাগজের মোড়ক হাতে মোতিলালের প্রবেশ এসো গোপাল, এসো আমার কোলে। দুষ্ট্র ছেলে, এ দুদিন আস নি কেন? মোতিলাল। জ্যাঠাইমা, তোমার জন্যে কী এনেছি বলে দেখি।