পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাটক ও প্রহসন SOVE নবীনের প্রবেশ কুমুদিনী। এসো এসে ঠাকুরপো। কী খুঁজছ? নবীন। ঘরের আলোটিকে ঘরে দেখতে না] পেয়ে খুঁজতে বেরিয়েছি। মোতির মা। হায় হায়, মণিহারা ফণী যাকে বলে! নবীন। কে মণি আর কে ফণী তা চক্ৰ নাড়া দেখলেই বোঝা যায়, কী বলে বউরানী? কুমুদিনী। আমাকে সাক্ষী মেনো না ঠাকুরপো। নবীন। ও-সব কথা এখন থাক! তোমার দাদার চিঠি এনেছি। কুমুদিনী। দেখি দেখি। ] দাদা আজ বিকেলে তিনটের সময় কলকাতায় এসেছেন। নবীন। আজই এসেছেন! তীর তোকুমুদিনী। লিখেছেন, বিশেষ কারণে আজই আসতে হল। নবীন। বউরানী, তার কাছে তো কালই যাওয়া চাই। কুমুদিনী। না, আমি যাব না। মুখে আঁচল চেপে কান্না মোতির মা। কেন, কী হল দিদি ? কুমুদিনী। দাদা আমাকে যেতে বারণ করেছেন। নবীন। বউরানী, তুমি নিশ্চয় ভুল করেছ। কুমুদিনী। না, এই তো লিখেছেন। নবীন। কোথায় ভুল করেছ বলব ? তোমার দাদা নিশ্চিত ঠিক করেছেন যে, আমার দাদা তোমাকে তঁদের ওখানে যেতে দেবেন না। সেই অপমান থেকে বাঁচাবার জন্যে তিনি তোমার রাস্তা সোজা করে দিয়েছেন। বুঝতে পেরেছ? কুমুদিনী। পেরেছি। কুমুদিনীর চিবুক ধরে মোতির মা। বাস রে! দাদার কথার একটু আড় হাওয়াতেই অভিমানের সমুদ্র উথলে ওঠে। নবীন। বউরানী, কাল তা হলে তোমার যাবার আয়োজন করি। কুমুদিনী। না, তার দরকার নেই। নবীন। দরকার আমাদের পক্ষেই যে আছে। তোমার দাদাকে দেখতে যাবার বাধা ঘটলে সে নিন্দে আমাদের সইবে কেন? চুপ করে রইলে কেন বউরানী? তোমার যাওয়া ঘটবেই, আর কালই ঘটবে এ আমি বলে দিচ্ছি। নবীন। কী উপায়টা ভেবেছ একটু খোলসা করে বলে দেখি বুদ্ধিমান। নবীন। দাদাকে গিয়ে বলব, বউরানীকে ওদের ওখানে যেতে দেওয়া চলবেই না। তুমি হয়তো রাজি হতে পাের, কিন্তু এ অপমান আমরা সইব না। শুনলেই দাদা আমার উপরে আগুন হয়ে উঠবে। তখনি পালকির হুকুম হবে। ওই-যে আসছেন দাদা। [উভয়ের প্রস্থান মধুসূদনের প্রবেশ মধুসূদন। শুতে আসবে না বড়োবউ? এখানে তোমার ঠাণ্ডা লাগবে যে। চলো, তোমার আপন ঘরে। যেতে ইচ্ছে করছে না? বড়োবাউ, দোষ করে থাকি তো মাপ করো! আমি তোমার অযোগ্য- আমাকে দয়া করবে না? কুমুদিনী। ছিছি, আমন করে বােলো না। আমাকে অপরাধী কোরো না। আমি তোমার দাসী৷ আমাকে আদেশ করো।