পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবিতা। দেশের দুর্দশা লয়ে যার ব্যবসায়, অন্ন যার অকল্যাণ মাতরক্ত-প্ৰায় — সেই ভীরু নতশির চিরশাস্তিভারে। রাজাকারা-বাহিরেতে নিত্যকারাগারে। বন্ধন-পীড়ন-দুঃখ-অসম্মান-সমাঝে। হেরিয়া তোমার মূর্তি কৰ্ণে মোর বাজে। আত্মার বন্ধনহীন আনন্দের গান মহাতীর্থযাত্রীর সংগীত, চিরপ্ৰাণ আশার উল্লাস, গম্ভীর নির্ভয় বাণী উদার মৃত্যুর। ভারতের বীণাপাণি, হে কবি, তোমার মুখে রাখি দৃষ্টি তার তারে তারে দিয়েছেন বিপুল ঝংকার নাহি তাহে দুঃখতান, নাহি ক্ষুদ্র লাজ, নাহি দৈন্য, নাহি ত্ৰাস। তাই শুনি আজ কোথা হতে ঝঙ্কা-সাথে সিন্ধুর গর্জন, অন্ধবেগে নিৰ্বরের উন্মত্ত নর্তন পাষাণপিঙর টুটি, বজ্রগর্জরব। ভেরিমন্দ্রে মেঘপুঞ্জ জাগায় ভৈরব। এ উদাত্ত সংগীতের তরঙ্গ-মাঝার, অরবিন্দ, রবীন্ত্রের লহো নমস্কার। তার পরে ঐারে নমি, যিনি ীড়াচ্ছলে গড়েন নূতন সৃষ্টি প্ৰলয়-অনলে, মৃত্যু হতে দেন প্ৰাণ, বিপদের বুকে সম্পদেরে করেন লালন, হাসিমুখে। ভক্তেরে পাঠায়ে দেন কটককান্তারে। রিক্তহস্তে শক্ৰমাঝে রাত্রি-অন্ধকারে; যিনি নানা কণ্ঠে কন, নানা ইতিহাসে, সকল মহৎ কর্মে, পরম প্রয়াসে, সকল চরম লাভে, ‘দুঃখ কিছু নয়— ক্ষত মিথ্যাক্ষতি মিথ্যামিথ্যা সৰ্ব ভয়। কোথা মিথ্যা রাজাকোথা রাজদণ্ড তার! কোথা মৃত্যু, অন্যায়ের কোথা অত্যাচার! ওরে ভীরু, ওরে মূঢ়, তোলো তোলা শির, আমি আছি, তুমি আছ, সত্য আছে স্থির।' শান্তিনিকেতন ৭ ভাদ্র ১৩১৪ বঙ্গদর্শন, ভাদ্র ১৩১৪