পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9\e রবীন্দ্র-রচনাবলী এসে হে, এসো হে, এসো হে, আমার বসন্ত এসো। নব শ্যামল শোভন রথে এসো বকুলবিছানো পথে, এসো বাজায়ে ব্যাকুল বেণু মেখে পিয়াল ফুলের রেণু। এসে হে, এসে হে, এসে হে আমার বসন্ত এসো। এসো ঘনপল্লবকুঞ্জে এসে হে, এসো হে এসো হে। এসো বনমল্লিকাকুঞ্জে এসো হে, এসো হে, এসো হে। মৃদু মধুর মদির হেসে এসো পাগল হাওয়ার দেশে, এসে হে, এসে হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো। অমিতা। এবার এসো তো নন্দিনী। তোমার দুটি চক্ষু আকাশের আলোতে দুটি অপরাজিতার মতো ফুটে উঠেছে। তোমার তো ভয় নেই, দ্বিধা নেই। তুমি সহজ বিশ্বাসেই মনে নিশ্চিত ঠিক করেছ সুন্দর তোমাকে বর দেবেনই। যাকে তিনি নিজে বেছে নেন। তার আর ভাবন কী। দখিন হাওয়ার ছোওয়া বুঝি লাগল। তোমার উপবনে। সুন্দর তোমার বনের শাখায়-শাখায় নাচের ছন্দ নিজে এনে দিয়েছেন। নুটু। রানী, ওর মনে ভয় নেই বলেই বুঝি ভুল আছে। নিজের সৌভাগ্য ও কি জানে ? কোথায় বসে বুঝি খেলছে। অমিতা। ওগো নন্দিনী, ওই যে গান উঠেছে। ওগো দখিন হাওয়া, ও পথিক হাওয়া, দোদুল দোলায় দাও দুলিয়ে। নূতন-পাতারী-পুলক-ছাওয়া পরশখানি দাও বুলিয়ে৷ আমি পথের ধারে ব্যাকুল বেণু হঠাৎ তোমার সাড়া পেনু গো— আহা, এসো আমার শাখায় শাখায় প্রাণের গানের ঢেউ তুলিয়ে। ওগো দখিন হাওয়া, ও পথিক হাওয়া, পথের ধারে আমার বাসা। জানি তোমার আসা-যাওয়া শুনি তোমার পায়ের ভাষা। আমায় তোমার ছোঁওয়া লাগলে পরে একটুকুতেই কঁপনি ধরে গো আহা, কানে কানে একটি কথায় সকল কথা নেয় ভুলিয়ে। এবার আনো তোমার নব কিশলয়ের নাচ। নুটু। রানী, সুন্দর যাকে আপনি এসে বর দেন। আমরা তো সে দলের লোক নই। অমিতা। এমন কথা বলিস নে বসস্তিকা। আমাদেরও ক্ষণে ক্ষণে ছোঁওয়া লাগে। আমরা পাই আবার হারাই। দানের ধর এখানে-ওখানে ছড়িয়ে যায়। সমস্ত জীবন ধরে সেইগুলিকেই কুড়িয়ে কুড়িয়ে গেথে রাখি, সেই কি কম ভাগ্য? তুই যা তো, বল্লারীকে ওই গানটা ধরিয়ে দে— একটুকু ছোঁওয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি । তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্লুনী৷ । কিছু পলাশের নেশা, কিছু বা চাপায় মেশা, তাই দিয়ে সুরে সুরে রঙে রসে জাল বুনি৷ চকিত মনের কোণে স্বপনের ছবি আঁকে। যেটুকু যায় রে দূরে ভাবনা কঁপায় সুরে, তাই নিয়ে যায় বেলা নূপুরের তাল গুনি৷