পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२88 রবীন্দ্র রচনাবলী ওদের সেই আলাপের আদি পর্বে যশস্বী লেখককে তৃপ্ত করবার জন্যে চাটুবাক্যের অমিতব্যয়কে বাঁশরি আতিথ্যের অঙ্গ বলেই গণ্য করত। পড়া শেষ হতেই বাঁশরি চৌকি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললে “মাস্টারপীস, শেলির জীবনী নিয়ে ফরাসি লেখক এরিয়েল নাম দিয়ে যে গল্প লিখেছে তারই সঙ্গে এর কতকটা তুলনা মেলে; কিন্তু ওঃ।” পৃথীশের মন উদ্দীপ্ত হয়ে উঠল। চায়ের পেয়ালা দ্বিতীয়বার ভরতি করে নিয়ে তার মধ্যে চামচ সঞ্চালন করতে করতে বললে, “দেখুন শ্ৰীমতী বাঁশরি, আমার একটা থিয়ােরি আছে, দেখে নেবেন একদিন, ল্যাবরেটরিতে তার প্রমাণ হবে। যে বিশেষ এনার্জি আছে মেয়েদের জৈব কণায়, যাতে দেহে মনে তাদের মেয়ে করেছে, সেইটেই কোনাে সূক্ষ্ম আকারে ব্যাপ্ত সমস্ত পৃথিবীতে। আচ্ছা, শ্ৰীমতী বাঁশরি, এটা আপনি কখনো কি নিজের মধ্যে অনুভব করেন না?” বাঁশরি একটু ইতস্তত করছিল। পৃথীশ বলে উঠল, “নিশ্চয়ই করেন এ আমি হলপ করে বলতে পারি। কীরকম সময়ে জানেন "At that sweet time when winds are wooing all vital things that wake to bring News of birds and blossomings.' বাঁশরি হাততালি দিয়ে উঠে বললে, “এতক্ষণে বুঝেছি আপনি কী বলছেন। মনে হয় 衣R一” পৃথ্বশ কথাটাকে সম্পূর্ণ করে বললে, “যেন গোলাপ গাছের মজ্জার ভিতরে যে শক্তি বিনা ভাষায় অন্ধকারে কেঁদে উঠছে, বলছে ফুল হয়ে ফুটব সে আপনারই ভিতরকার প্রাণীেৎসুক্য। বাৰ্গস জানেন না, তিনি যাকে বলেন Ellan Vital সেটা স্ত্রী-শক্তি।” বাঁশরি পৃথীশের কথাটা একটু বদলিয়ে দিয়ে বললে, “দেখুন পৃথীশবাবু, নিজেকে ওই-যে ছড়িয়ে জানিবার তত্ত্বটা বললেন। ওটা মাটিতে তেমন মনে হয় না। যেমন হয় জলে। জলের ঘাটে মেয়েদের একটা বিশেষ টান আছে, দেখেন নি কি?” পৃথীশ চমকে উঠে বলে উঠল, “আপনি আমাকে ভাবালেন। কথাটা এতদিন মনে আসেনি। স্ত্রী-পুরুষে দ্বৈততত্ত্ব আমার কাছে স্পষ্ট হল একমুহূর্তে। আর কিছু নয়, জল ও স্থল। মাটি ও বাতাসে যে অংশ জলীয় সেই অংশেই নারী ওই জলেই তো ধরণীর অনুপ্রাণনা।” সেই দিন পৃথীশ চঞ্চল হয়ে উঠে প্রথম বাঁশরির হাত চেপে ধরেছিল, বলেছিল, “ক্ষমা জলকে অন্তগূঢ় সৃষ্টিশক্তিকে মুক্তি দেবার জন্যে।” কিছুক্ষণ বাদে আস্তে আস্তে বাঁশরি হাত ছাড়িয়ে নিলে। পৃথীশ বললে, “দােহাই আপনার, আমাকে ব্যর্থতার হাত হতে বাঁচাবেন। এ আমার কেবল ব্যক্তিগত আবেদন নয়, আমি বলছি সমস্ত বাংলার সাহিত্যের হয়ে। আমি ইদারার মতো, জল দানের গভীর সঞ্চয় আছে আমার চিত্তে, কিন্তু তুমি নারী, জলের ঘট তোমার মাথায়।” সেই দিন ওর সম্ভাষণ আপনি’ হতে হঠাৎ “তুমিতে এসে পৌঁছল, ইঙ্গিতেও আপত্তি उठेल नी (कथो९। বাঁশরিকে চিনত না বলেই সেদিন পৃথীশ এতবড়ো প্রহসনের অবতারণা করতে পেরেছিল। বাঁশরি মখমলের খাপের থেকে নিজের ধারালো]। হাসি তখনো বের করে নি, হতভাগ্য তাই এমন নিঃশঙ্ক ছিল। ও ঠিক করে রেখেছিল আধুনিক কালচারড মেয়েরা চকোলেট ভালোবাসে আর ভালোবাসে কড়িমধ্যমে ভাবুকতা। এর পর থেকে এই বিখ্যাত ঔপন্যাসিকের প্রতিভায় প্ৰাণ সঞ্চার করবার একমাত্র দায়িত্ব নিলে বাঁশরি। হেসে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করলে পুরুষ-বন্ধুরা, মেয়ে-বন্ধুরা ওর সজীৰ সম্পত্তিটিকে নিয়ে ঠিক লোভ করে নি। ঈর্ষা করেছিল। ইংরেজ অ্যাটর্নি আপিসের শিক্ষানবিশ সুধাংশু একদিন পৃথীশের রিফু-করা মুখ নিয়ে কিছু বিদ্রুপ করেছিল, বাঁশরি বললে, “দেখো