পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

लक्षाष्ट्र क्लिश Հ8Գ পাণ্ডেলের সংকোচ ভাঙবার জন্যে নিজে মোটর হাঁকিয়ে ইচ্ছে করে গাড়ি খাদের মধ্যে ফেলেছিল। প্ল্যান করেছিল মিস্টার স্যাণ্ডেলকে দু হাতে তুলে ধরে পতিতোদ্ধার করবে- হবি তো হ, স্যাণ্ডেলের হাতে হল কম্পাউন্ড ফ্র্যাকচার- কী ড্রামাটিক! রিয়ালিজমের একেবারে চূড়ান্ত। ভালোবাসার এত বড়ো আধুনিক পদ্ধতি বেদব্যাসের জানা ছিল না- ভেবে দেখুন সুভদ্রার কত বড়ো চান্স মারা গেল, আর অর্জনেরও কবজি গেল বেঁচে।” “আপনিও তো কম। মডার্ন নন- আমার মতো নির্লজকেও লজ্জা দিতে পারেন।” “কী কথা বলেন পৃথীশবাবু, বিনয় করবেন না। আপনি নির্লজ্জ? লজ্জায় গলা দিয়ে সন্দেশ চলবে না। কলমটার কথা স্বতন্ত্র।” পৃথীশ মনে মনে বললে, “বাস রে দেখতে এমন নিটাল কোমল, মনটা কী চমৎকার নিষ্ঠুর। বেমানানের ষোলো আনা শোধ না নিয়ে ছাড়বেন না।” এখনাে বাঁশরির দেখা নেই। হঠাৎ পৃথীশের মনে হল, হয়তো সবটাই তাকে শাস্তি দেবার ষড়যন্ত্র। রাগ হল বাঁশরির ”পরে, মনে মনে বললে, আমারও পালা আসবে। এমন সময় কাছে এসে উপস্থিত রাঘুবংশিক চেহারা শালগ্রাংশুর্মহাভুজঃ সােমশংকর। গীেরবর্ণ, রোদেপুড়ে কিছু ছায়াচ্ছন্ন, ভারী মুখ, দাড়ি গোঁফ কামানো, চুড়িদার সাদা পায়জামা, চুড়িদার সাদা আচকন, মাথায় সাদা মসলিনের পাঞ্জাবি-কায়দায় পাগড়ি, পায়ে শুড়তোলা দিল্লির নগরাজুতো, দেহটা যে ওজনের কণ্ঠস্বরটাও তেমনি। পৃথীশের বুঝতে বাকি নেই, এই লোকটাই আজকের দিনের প্রধান নায়ক। অৰ্চনা পরস্পরের পরিচয় উপলক্ষে বললে, “রাজা বাহাদুর সোমশংকর রায়।” পৃথীশের মনটা পুলকিত হয়ে উঠল। শৌখিন পার্টিতেও সাহিত্যিকের সম্মান ছাড়িয়ে উঠেছে। আভিজাত্যের খেতাবকে। যেচে আসছে আলাপ করতে। এতক্ষণ সংকোচে পীড়িত পৃথীশ উৎকণ্ঠিত হয়ে আগমন প্রতীক্ষা করছিল বাঁশরির, ও-যে “সর্বত্র পূজ্যতে’র দলে সেইটে প্রমাণ করবার জন্যে। আর প্রয়োজন রইল না- এমন-কি, ভুলে গেল এণ্ডির চাদরের কালির চিহ্ন। অৰ্চনা চলে গেল অন্য অতিথিদের সেবায়। পৃথীশ ব্যস্ত হয়ে বললে, “নিশ্চয়।” রাজা বাহাদুর বললে, “আপনার কথা প্রায়ই শুনতে পাই মিস বাঁশরির কাছ থেকে। তিনি আপনার ভক্ত।” ‘ঈর্ষা করবার মতো নয়। ওঁর ভক্তিকে অবিমিশ্র বলা যায় না। তাতে ফুল যা পাই সেটা ঝরে পড়ে, কাঁটাগুলো বরাবর থাকে বিধে।” “আপনার একখানা বই পড়েছিলুম, মনে হচ্ছে তার নাম রক্তজবা। চমৎকার, হিরোয়িন যার নাম রাগিণী সে দেখলে স্বামীর মন আর-একজনের 'পরে, তখন স্বামীকে মুক্তি দেবে বলে মিথ্যে চিঠি বানালে, প্রমাণ করতে চাইলে ও নিজেই ভালোবাসে প্রতিবেশী বামন দাসকে— সে জায়গাটায় লেখার কী জোর আর কী ওরিজিনাল আইডিয়া।” পৃথীশ চমকে উঠল। এও কি শাস্তির উদ্দেশে তার প্রতি ইচ্ছাকৃত ব্যঙ্গ, না দৈবকৃত গলদ । রক্তজবা বইখানা যতীন ঘটকের। যতীন পৃথীশের প্রতিযোগী, সকলেই জানে। উভয়ের উৎকর্ষ বিচার নিয়ে রুচির সংঘাত মাঝে মাঝে শোকাবহ হয়ে ওঠে এটা কি ওই সম্মুখবর্তী অতিকায় জীবের স্থূল বুদ্ধির অগােচর। রক্তজবায় স্বামীপ্ৰেমে বঙ্গনারীর কলঙ্ক স্বীকারের অসামান্য বিবরণে বাঙালি পাঠকের বিগলিত হৃদয় শুধু কেবল ছাপানাে বইয়ের পাতাকেই বাষ্পাকৃত করেছে, তা নয়, সিনেমা থিয়েটারেও তার আদ্রতা প্রতি সন্ধ্যায় ব্যাপ্ত হয়ে থাকে। এই সাধারণ বাঙালি পাঠক ও দর্শকের অশিক্ষিত রুচির প্রতি যে পৃথীশ অপরিসীম অবজ্ঞা অনুভব করে সেই মানুষেরই Sb Sq