পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ढलळीव्र निशिन् । S(ሰ S “হাঁ, তুলব, যদি সম্ভব হয়।” বাঁশরির প্রত্যেক কথায় পৃথীশের মনটা যেন চুমুকে মদ খাচ্ছে। এই দলের মেয়ের সঙ্গে এই ওর প্রথম আলাপ | অপরিচিতের অভিজ্ঞতায় মনটা পথ হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছে পদে পদে। কোন কথাটা পৌঁছােয় কোন অর্থ পর্যন্ত, কতদূর পা বাড়ালে পড়বে না। গর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ ঠাহর করে উঠতে পারছে না। এই অনিশ্চয়তা মনকে উদভ্ৰান্ত করে রেখেছে দিনরাত। যে কথার যে উত্তর দেয় নি বাড়িতে ফিরে এসে সেইটে ও বাজাতে থাকে, ঠিক সময় কেন মনে আসে নি ভেবে হায় হায় করে। বাঁশরি ওকে অনেকটা প্রশ্রয় দিয়েছে, তবু পৃথীশ বিষম ভয় করে তাকে। নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বলে সাহসী পুরুষের স্পর্ধকেই পুরস্কৃত করে মেয়েরা, যারা ওদের সসংকোচে পথ ছেড়ে দেয়, বঞ্চিত হয় তারাই। নিজের দৃঢ় বিশ্বাস, ওর গোয়াতুমি যদি হত খাটি গিনি সোনার দরের, বাজালে টন করে উঠত, তা হলে মেয়ে মহলে উড়ত ওর জয়-পতাকা। পুরুষের উপকরণে বিভীষিকা বীভৎসতার দাম আছে ওদের কাছে। পৃথীশ স্পষ্ট বুঝেছে যে, নিজেদের সমাজের উপর বাঁশরির জোর দখল। ওকে সবাই যে ভালোবাসে তা নয়, কিন্তু তুচ্ছ করবার শক্তি নেই কারো। তাই সে যখন স্বয়ং পৃথীশকে পাশে করে নিয়ে চলল আসরের মধ্যে, পৃথীশ তখন মাথাটা তুলে চলতেই পারলে, যদিও লক্ষ্মীছাড়া এণ্ডিচাদরের কালির লাঞ্ছনা মন থেকে সম্পূর্ণ ঘোচে নি। জনতার কেন্দ্ৰস্থলে এসে পৌঁছল, কিন্তু ওর উপর থেকে সমবেত সকলের লক্ষ্য তখন গেছে সরে । সবেমাত্র উপস্থিত হয়েছে আর-একটি লোক তার উপরে মন না দিয়ে চলে না। সোেমশংকর তার কাছে বিনয়াবনত, সুষমার দেহমান ভক্তিতে আবিষ্ট। অন্য সকলে কীভাবে ওকে অভ্যর্থনা করবে স্থির করতে পারছে না, ভক্তি দেখাতেও সংকোচ, না দেখাতেও লজ্জা । দেহের দৈর্ঘ্য মাঝারি আয়তনের চেয়ে কিছু বড়ো, মনে হয় চারিদিকের সকলের থেকে পৃথক তার ঋজু সুদৃঢ় শরীর, যেন ওকে ঘিরে আছে একটা সূক্ষ্ম ভৌতিক পরিবেষ্টন। ললাট অসামান্য উন্নত, জুলজুল করছে দুই চােখ, ঠোঁটে রয়েছে অনুচ্চারিত অনুশাসন, মুখের রঙ পাণ্ডুর স্বচ্ছাশ্যাম, অন্তর থেকে বিচ্ছুরিত দীপ্তিতে ধৌত। দাড়িগোঁফ কামানাে, সুডৌল মাথায় ছােটাে করে ছােটা চুল, পায়ে নেই জুতো, তসরের ধুতিপরা, গায়ে খয়েরি রঙের ঢ়িলে জামা। নাম মুক্তারাম শৰ্মা; সকলেরই বিশ্বাস আসল নাম ওটা নয়। পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে ঈষৎ হেসে শাস্ত হয়ে থাকে, তা নিয়ে কল্পনা করে নানা লোকে নানা প্রকার, কোনোটা অদ্ভুত অপ্রাকৃত, কোনােটা কুৎসায় কটু। ওর শিক্ষা যুরোপে এইরকম জনশ্রুতি— নিশ্চিত প্রমাণ নেই। কলেজের ছেলেরা অনেকে ওর কাছে আসে পড়া নেবার জন্যে, তাদের বিশ্বাস পরীক্ষায় উতরিয়ে দিতে ওর মতো কেউ নেই, অথচ কলেজি শিক্ষার পরে ওর নিরতিশয় অবজ্ঞা। এই শেখাবার উপলক্ষ করে ছেলেদের উপর ওর প্রভাব পড়ছে ছড়িয়ে। এমন একদল আছে যারা ওর জন্য প্ৰাণ দিতে পারে। এই ছেলেদের ভিতর থেকে বাছাই ক’রে ও একটি অন্তরঙ্গ চক্র তৈরি করেছে কি না। কে জানে— হয়তো করেছে। ছুটির সময় একদলকে সঙ্গে নিয়ে ও ভ্রমণ করতে যায় দূর প্রদেশে, দেখা যায় সব জায়গাতেই ওর পরিচিত ভক্ত, তাদের ভাষাও ওর জানা। সুষমা যখন প্রথম কলেজে প্রবেশ করেছে তখন মুক্তারামের কাছে ওর পাঠ আরম্ভ। বাঁধা পাঠ্য বইটাকে গৌণ করে শিক্ষক পড়িয়েছে আপন মত অনুসারে নানা বিষয়ের বই। ছুটির সময় যথাযোগ্য স্থানে নিয়ে গিয়ে ওকে ছুরি খেলতে, ঘোড়ায় চড়তে, ডিঙি নীেকো দুহাতে দাঁড় ধরে বাইতে করেছে। পটু, মোটর গাড়ির কলের তত্ত্ব, চালানাের কৌশল নিপুণ করে শিখিয়েছে। সুষমার বিধবা মা ব্রাহ্মসমাজের মেয়ে। এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান ব্রাহ্মমতে উপাসনা করে হয় এই তার ছিল ইচ্ছে। সুষমা জিদ করে ধরে পড়ল অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে মুক্তারামকে