পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Nq(t S রবীন্দ্র রচনাবলী দিয়ে। মুক্তারামের কোন সম্প্রদায় কেউ জানে না, ব্রাহ্মসমাজে তার গতিবিধি নেই, আর আচরণ নয় নিষ্ঠাবান হিন্দুর মতো। সুষমার মা বিভাসিনী গভীর ভক্তি করে মুক্তারামকে, তবু তার ইচ্ছা! ছিল সমাজের লোক দিয়েই ক্রিয়াটা নিম্পন্ন হয়। সুষমা কোনোমতেই রাজি হল না। আজ মুক্তারামের আহ্বান এখানে সেই কারণেই। মুক্তারামকে সবাই সংকোচ করে, বাঁশরি করে না। সে এসেই একটি ছোটােরকম নমস্কার করে বললে, “সুষমার মাস্টারিতে আজ শেষ ইস্তফা দিতে এসেছেন?” “কোন দেব? আরো একটি ছাত্র বাড়ল।” বাঁশরি সোেমশংকরের দিকে তীব্ৰ কটাক্ষ হেনে বললে, “তাকে মুগ্ধবোধের পাঠ শুরু করাবেন? ওই দেখুন-না, মুগ্ধতার তলায় ডুবেছে মানুষটা, হঠাৎ ওর বোধোদয় কোনোদিন হয় যদি সেদিন ডাক্তার ডাকতে হবে।” মুক্তারাম কোনো উত্তর না করে বাঁশরির মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকালে। নীরবে জানালে একে বলে ধৃষ্টতা। বঁশিরির মতো মেয়েও কুষ্ঠিত হল এই দৃষ্টিপাতে। ܕܚ স্বল্পজলা নদীর স্রোতঃপথ প্রশস্ত হয়ে এখানে-ওখানে চর পড়ে যেরকম দৃশ্যটা হয় সেইরকম চেহারা বিভাসিনীর। শিথিল প্রসারিত হয়েছে দেহ, কিছু মাংসাবাহুল্য ঘটেছে। তবু চাপা পড়ে নি যৌবনের ধারা। তার সৌন্দর্য স্বীকার করতে হয় আজও। পতিকুলে মেয়েটি ছাড়া আর কেউ নেই তার, স্বামীর দত্ত সম্পত্তি থেকে সংসারের অভাব সহজেই পূরণ হয়ে আরো কিছু হাতে থাকে। কন্যার ভবিষ্যৎ লক্ষ করে সেই টাকা এতদিন সঞ্চিত হয়েছে বিশেষ যত্নে। সোেমশংকরের সঙ্গে মেয়ের বিবাহ প্ৰস্তাবের পর থেকে সেই দায়িত্বের টান এসেছে আলগা হয়ে। এই বিবাহ যে হতে পারে এ ছিল। অভাবনীয়। সবাই জানত রাজকুমার সম্পূর্ণ বাঁশরির প্রভাবের অধীনে, কেউ যে তার নাগাল পেতে পারে এ কথা মনে হত অসম্ভব। কিন্তু সেসময় বেঁচে ছিল পূর্বতন রাজা প্রভৃশংকর, বাঁশরির সঙ্গে সোেমশংকরের বিবাহের প্রধান বাধা। অল্পদিন হল পিতার মৃত্যু হয়েছে। তবু জাতের বাধা কািটতে চায় না। ক্ষত্ৰিয়বংশের বাইরে রাজার বিবাহ প্রস্তাবে প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এমন সময়ে মুক্তারাম এই সম্বন্ধ পাকা করলেন কী করে সেই এক কাহিনী। বিভাসিনী এসে সংবাদ দিল, সময় উপস্থিত। ঘরের ভিতরের বেদি রচনা করে সভার স্থান হয়েছে। নিমন্ত্রিতেরা সবাই চলল সেইদিকে। বাঁশরির নিমন্ত্রণ হয় নি, তা ছাড়া কন্যােপক্ষের ইচ্ছে ছিল না। সে উপস্থিত থাকে। বাঁশরি এসেছে ভদ্ররীতি এবং ভদ্রসমাজকে উপেক্ষা করে। তার দৃঢ় পণ সে থাকবে অনুষ্ঠান-সভার মধ্যেই। কেউ-বা হাসবে, কেউ-বা। রাগবে, কিন্তু কিসের কেয়ার করে সে। মনকে শক্ত করে মাথা তুলে পা বাড়াচ্ছিল। ঘরের মধ্যে, পা গেল কেঁপে, বোধ করি। চোখে আসছিল জল, পারলে না ঘরে যেতে, আটকে রইল বাইরে। পৃথীশ জিজ্ঞাসা করলে, “ঘরে যাবে না?” বাঁশরি বললে, “না, সস্তাদামের সদুপদেশ শুনলে গায়ে জুর আসে।” “সদুপােদশ!” “হাঁ, উপদেষ্টার শিকারের এই তো সময়, যাকে বলে সুবর্ণ সুযোগ। পায়ে দড়ি-বাঁধা জীবের 'পরে নিঃশেষ করে দেয় শব্দভেদী বাণের তৃণ, সঙ্গে সঙ্গে দুঃখ পায় আহ্বত-রবাহতের দল।” “আমি একবার দেখে আসি-না।” y “না, শোনো, একটা প্রশ্ন আছে। সাহিত্য-সম্রাট, গল্পটার মজা যেখানে সেখানে পোঁচেছে “আমার হয়েছে। অন্ধগোলাঙ্গুলনায়। লেজটা ধরেছি। চেপে বাকিটা টান মেরেছে আমাকে, সমস্ত চেহারাটা পাচ্ছি নে। মোট কথাটা বুঝছি সুষমা বিয়ে করবে। রাজাবাহাদুরকে, পাৰে ঐশ্বর্য, তার বদলে হাতটা দিতে প্ৰস্তুত হৃদয়টা নয়।” . . ܫ