পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় Rసి ৫ ভাদ্র ১৩২১ তারিখে পঞ্চাশংবর্ষ পূর্ণ করিলে উক্ত দিবসে পরিষৎ-মন্দিরে তঁহাকে অভিনন্দিত করিবার জন্য এক বিরাট সান্ধান্সম্মিলন অনুষ্ঠিত হইয়াছিল। বামেন্দ্রসুন্দরের সহিত রবীন্দ্রনাথের গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। তিনি এই উপলক্ষে স্বহস্তে একটি অভিনন্দনপত্র রচনা করিয়া কোনো শিল্পীর দ্বারা অলংকৃত করাইয়াছিলেন। “সাহিত্য-পরিষৎ-পঞ্জিকা'য় (১৩২২) লিখিত হইয়াছে : “এই উপলক্ষে বোলপুর হইতে শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় পাদরী এন্ডরু সাহেবকে সঙ্গে লইয়া সভায় আসিয়াছিলেন।... শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বামেন্দ্রবাবুকে চন্দন দান করিয়া নিজের লিখিত নিম্নোক্ত অভিনন্দন-পত্ৰ পড়িয়া শোনান।. এই অভিনন্দন-পত্ৰখনি কার্ডের ন্যায় কাগজে নানা রঙ্গীন লতাপাতার ছবি দ্বারা সজ্জিত এবং রচনাটুকু রবীন্দ্রনাথের নিজের হস্তক্ষেরে লিখিত; ইহার অপর পৃষ্ঠাতেও বঙ্গীন আলিম্পনের মধ্যে বেদের একটি আশীৰ্ব্বাচন মন্ত্র লেখা আছে। এই কাগজের অভিনন্দনখানি চিত্ৰ-সৌন্দর্ঘ্যে মনোরম ও সুদৃশ্য হইয়াছিল। ‘ভারতী’ ও ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় অভিনন্দনপত্ৰখানি ব্লক করিয়া মুদ্রিত হয়। ১০. রামেন্দ্রসুন্দরের অগ্রজ মামাতো ভাই আশুতোষ বাজপেয়ী তীহাকে আত্মস্মৃতি লিখিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন, রামেন্দ্রসুন্দর তাহাতে সম্মত না হওয়ায় তিনিই একটি নাতিদীর্ঘ জীবনী রচনা করেন ও রবীন্দ্রনাথ ২৮ ফাল্গুন ১৩২৪ তাহার ভূমিকা লিখিয়া দেন। কিন্তু গ্ৰন্থপ্রকাশে অম্বাভাবিক বিলম্ব হইয়াছিল; গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স হইতে চৈত্র ১৩৩১-এ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ১১. বরিশালের লাখুটিয়ার জমিদার এবং কবি-সাহিত্যিক দেবকুমার রায়চৌধুরী (১৮৮৬১৯২৯) ছিলেন রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়-স্থানীয়, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাতুল। কবি-নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল বায়ের (১৮৬৩-১৯১৩) স্নেহধন্য দেবকুমার দ্বিজেন্দ্রলাল’ নামে তাহার একটি জীবনী প্রণয়ন করিয়া তাহার ভূমিকা লেখার জন্য রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করিলে তিনি বর্তমান রচনাটি লিখিয়া দেন। রচনাটি ১২ ভাদ্র ১৩২৪ তারিখে লিখিত "ভূমিকা’-র অন্তর্ভুক্ত করিয়া দেবকুমার লেখেন : 'একদিন দ্বিজেন্দ্রলালের সহিত মহাকবি রবীন্দ্রনাথের যথেষ্ট সদভাব ও বন্ধুত্ব ছিল। বিশেষ, দ্বিজেন্দ্রলালের দিব্যপ্রতিভা ও দুর্লভ জীবন সম্বন্ধে মতামত প্ৰকাশ করিতে পারেন, এমন শক্তিমান পুরুষ বর্তমান বঙ্গদেশে রবীন্দ্রনাথের তুলা আর বড়ো-বেশি যে কেহ আছেন, আমি মনে করি না। এই কারণে, এ গ্রন্থের একটা ভূমিকা লিখিয়া দেওয়ার জন্য আমি রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করিয়াছিলাম। তিনি তদনুসারে অতি সংক্ষেপে আমাকে যেটুকু লিখিয়া পাঠাইয়াছেন, সকৃতজ্ঞ অস্তরে তাঁহাই এখন আমি এ স্থলে উদ্ধৃত করিয়া বিদায় গ্রহণ করিলাম।” ১২. প্রবাসী’-সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের কনিষ্ঠ পুত্র প্রসাদ (মুলু) স্বল্পকালের জন্য শাস্তিনিকেতন ব্রহ্মবিদ্যালয়ের ছাত্ররূপে ভর্তি হন। তঁহার স্বাস্থ্য ভালো ছিল না; কিন্তু রুগণ শরীরেও মুলু আশ্রমজীবনের সহিত ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হইয়াছিলেন; ভুবনডাঙায় একটি নৈশবিদ্যালয় স্থাপন করিয়া পুরানাে সংবাদপত্র বিক্রয়ের অর্থে তিনি দরিদ্র বালকদের লেখাপড়া শিখাইবার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। তিনি দীর্ঘজীবী ছিলেন না, অল্প কয়েকদিনের জুরে কলিকাতায় তাহার জীবনাবসান হয় ১৯ ভাদ্র ১৩২৬ তারিখে। ৪ আশ্বিন তাহার শ্রদ্ধাদিনে রবীন্দ্রনাথ শাস্তিনিকেতন মন্দিরে বিশেষ উপাসনা করেন ও রামানন্দের অনুরোধে সেটি লিখিয়া তাহাকে পঠাইয়া লেখেন : "মুলুর শ্রদ্ধািদনের উপাসনা উপলক্ষে আমি যে বক্তৃতা করিয়াছিলাম তাহার সারমন্ম লিখিয়া পাঠাইতেছি। যদি কোনোরূপে ব্যবহার করিতে ইচ্ছা করেন তা করবেন। ইহার কাপি আমার কাছে নাই। অতএব প্রয়োজন অতীত হইলে ইহা আমাকে পঠাইয়া দিবেনঅগ্রহায়ণের শান্তিনিকেতনে ছাপিব।” রচনাটি অগ্রহায়ণ-সংখ্যা শান্তিনিকেতন'-এ মুদ্রিত হইয়াছিল, কিন্তু তৎপূর্বেই সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র তত্ত্ব-কৌমুদী ১৬ কাৰ্তিক ১৮৪১ শক (১৩২৬)-সংখ্যায় উহা ছাপাইয়া দেয়। রচনাটি পরেও নানা স্থানে নানা ভাবে মুদ্রিত হইয়াছিল। ১৩. রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় পুত্রের স্মৃতিরক্ষার্থে শান্তিনিকেতনের ছাত্র ও শিক্ষকদের রচনার