পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী শালতারুশ্রেণীতলে যে কঙ্করখািচত পথ আছে, সেই পথে কতদিন সূর্যস্তকালে তাহার সহিত ধর্ম এবং জনশূন্য প্রাস্তরের নিবিড় নিস্তব্ধতার উধ্বদেশে আকাশের সমস্ত তারা উন্মীলিত হইয়াছে। এখানকার এই উন্মুক্ত আকাশ ও দিগন্তপ্রসারিত প্রস্তরের মাঝখানে আমি তাহার উদঘাটিত উন্মুখ হৃদয়ের অন্তর্দেশে দৃষ্টিক্ষেপ করিবার অবকাশ পাইয়াছিলাম। এই নবীন হৃদয়টি তখন প্রকৃতির সমস্ত ঋতুপরম্পরার রসম্পর্শে, সাহিত্যের বিচিত্র ভাবান্দােলনের অভিঘাতে ও কল্যাণসাগরে আপনাকে সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিবার আনন্দে অহরহ স্পন্দিত হইতেছিল। এই সময়ে সতীশ ব্রহ্মবিদ্যালয়ের বালকদের জন্য উতঙ্কের উপাখ্যান অবলম্বন করিয়া "গুরুদক্ষিণা’-নামক কথাটি রচনা করিয়াছিল। এই ক্ষুদ্র কথাগ্রন্থটির মধ্যে সতীশ তাহার ভক্তিনিবেদিত তরুণ হৃদয়ের সমস্ত অসমাপ্ত আশা ও আনন্দ রাখিয়া গেছে- ইহা শ্ৰদ্ধার রসে সুপরিণত ও নবজীবনের উৎসাহে সমুজ্জ্বল— ইহার মধ্যে পূজাপুষ্পের সুকুমার শুভ্রতা অতি কোমলভাবে অস্নান রহিয়াছে। এই গ্রন্থটুকুকে সে শিল্পীর মতো রচনা করে নাই— এই আশ্রমের আকাশ বাতাস ছায়াও সতীশের সদ্য-উদবােধিত প্ৰফুল্ল নবীন হৃদয়ে মিলিয়া গানের মতো গ্রন্থসমালোচনা করিতে বসিয়া গ্রন্থের কথা অতি অল্পই বলিলাম, এমন অনেকে মনে করিতে পারেন। বস্তুত তাহা নহে। সতীশের জীবনের যে অংশটুকু আমি জানি সেই অংশের পরিচয় এবং গ্রন্থের আলোচনা, একই কথা। এই বুঝিয়া পাঠকগণ যখন “গুরুদক্ষিণা' পাঠ করিবেন, তখনই তঁহারা এই গদ্যকাব্যটির সৌন্দর্য সম্পূর্ণরূপে ধারণা করিতে পরিবেন। গ্রন্থে যাহা আছে গ্ৰন্থই তাহার পরিচয় দিবে, গ্রন্থের বাহিরে যাহা ছিল তাঁহাই আমি বিবৃত করিলাম। প্রেরিত হইয়াছিল। সেই পত্রে অন্যান্য কথার মধ্যে তাহার ভাবী জীবনের আশা, তাহার বর্তমান জীবনের সাধনার কথা সে লিখিয়াছিল- সে-সব কথা এখন ব্যর্থ হইয়াছে- সেগুলি কেবল আমারই নিকটে সত্য- অতএব সেই কথা কয়টি কেবল আমি রাখিলাম। তাহার পত্রের অবশিষ্ট অংশ ও তাহার কবিতাটি এইখানে প্ৰকাশ করিতেছি। সতীশের শেষ রচনাটি 'তাজমহল’-নামক একটি কবিতা। কিছুদিন হইল, সে পশ্চিমে বেড়াইতে গিয়াছিল। আগ্রার তাজমহল-সমাধির মধ্যে সে মমতাজের অকালমৃত্যুর সৌন্দর্য দেখিয়াছিল। অসমাপ্তির মাঝখানে হঠাৎ সমাপ্তি- ইহারও একটা গৌরব আছে। ইহা যেন একটা নিঃশেষ-বিহীনতা রাখিয়া যায়। পৃথিবীতে সকল সমাপনের মধ্যেই জরা ও বিকারের লক্ষণ দেখা দেয়, সম্পূর্ণতা আমাদের কাছে ক্ষুদ্র সসীমতারই প্রমাণ দিয়া থাকে। অতুল সৌন্দর্যসম্পদও আমাদের কাছে মায়া বলিয়া প্রতিভাত হয়; কারণ, আমরা তাহার বিকৃতি, তাহার শেষ দেখিতে পাই। মমতাজের সৌন্দর্য এবং প্রেম অপরিতৃপ্তির মাঝখানে শেষ হইয়াই অশেষ হইয়া উঠিয়াছে— তাজমহলের সুষমাসীেষ্ঠবের মধ্যে কবি সতীশ সেই অনন্তের সৌন্দর্য অনুভব করিয়া তাহার জীবনের শেষ কবিতা লিখিয়াছিল। সতীশের তরুণ জীবন ও সম্মুখবর্তী উজ্জ্বল লক্ষ্য, নব পরিস্ফুট আশা ও পরিপূর্ণ আত্মবিসর্জনের মাঝখানে অকস্মাৎ ১৩১০ সালের মাঘী পূর্ণিমার দিনে ২১ বৎসর বয়সে সমাপ্ত হইয়াছে। এই সমাপ্তির মধ্যে আমরা শেষ দেখিব না, এই মৃত্যুর মধ্যে আমরা অমরতই লক্ষ করিব। সে যাত্রাপথের একটি বাঁকের মধ্যে অদৃশ্য হইয়াছে, কিন্তু জানি তাহার পাথেয় পরিপূর্ণ— সে দরিদ্রের মতো রিক্তহস্তে জীর্ণ শক্তি লইয়া যায় নাই বঙ্গদর্শন, চৈত্র ১৩১০ r '७झझिा' शgछ्न्न जूभिका ४७SS