পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

A 8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী দুঃখ এ নয়, সুখ নহে গো— গভীর শান্তি এ যে, আমার সকল ছাড়িয়ে গিয়ে উঠল কোথায় বেজে। ছাড়িয়ে গৃহ, ছাড়িয়ে আরাম, ছাড়িয়ে আপনারে সাথে করে নিল আমায় জন্মমরণাপারে এল পথিক সোজে৷ চরণে তার নিখিল ভূবন নীরব গগনেতে— আলো-আঁধার আঁচলখনি আসন দিল পেতে | এতকালের ভয়ভাবনা কোথায় যে যায় সরে, ভালোমন্দ ভাঙাচোরা আলোয় ওঠে ভরে-- কালিমা যায় মেজে ||- দুঃখ এ নয়, সুখ নহে গো — গভীর শান্তি এ যে। জীবনকে আমরা অত্যন্ত সত্য বলে অনুভব করি কেন? কেননা এই জীবনের আশ্রয়ে আমাদের চৈতন্য বহুবিচিত্রের সঙ্গে আপনার বহুবিধ সম্বন্ধ অনুভব করে। এই সম্বন্ধবােধ বর্জিত হয়ে থাকলে আমরা জড় পদার্থের মতো থাকতুম, সকলের সঙ্গে যোগে নিজেকে সত্য বলে উপলব্ধি করতে পারতুম না। এই সুযোগটি দিয়েছে বলেই প্রাণকে এত মূল্যবান জানি। মৃত্যুর সম্মুখেও যাঁদের চিত্ত প্ৰসন্ন ও প্রশান্ত থাকে তীরা মৃত্যুর মধ্যেও সেই মূল্যটি দেখতে পান। যিনি সকল সম্বন্ধের সেতু, সকল আত্মীয়তার আধার, বহুর মধ্য দিয়ে যিনি এককে বিধৃত করে রেখেছেন, তঁরা মৃত্যুর রিক্ততার মধ্যে তাকেই সুস্পষ্ট করে দেখতে পান। সেইজনেই এই মৃত্যুপথের পথিক আমাকে গান গাইতে বলেছিলেন, পূর্ণতার গান, আনন্দের গান। তাঁকে গান শুনিয়ে ফিরে এসে সে রাত্রে আমি একলা বসে ভাবলুম, মৃত্যু তো জীবনের সব শেষের ছেদ, কিন্তু জীবনেরই মাঝে মাঝেও তো পদে পদে ছেদ আছে। জীবনের গান মরণের শমে এসে থামে বটে, কিন্তু প্ৰথম থেকে শেষ পর্যন্ত তার তাল তো কেবলই মাত্রায় মাত্রায় ছেদ দেখিয়ে যায়। সেই ছেদগুলি যদি বেতালা না হয়, যদি তা ভিতরে ভিতরে ছন্দােময় সংগীতের দ্বারা পূর্ণ হয়। তা হলেই শমে এসে আনন্দের বিচ্ছেদ ঘটে না। কিন্তু ছেদগুলি যদি সংগীতকে, পূর্ণতাকে বাধা দিয়ে চলে, তা হলেই শাম একেবারে নিরর্থক হয়ে ওঠে। জীবনের ছেদগুলি যদি তাগে, ভক্তিতে, পূর্ণস্বরূপের কাছে আত্মনিবেদনে ভরিয়ে রাখতে পারি— মীেচাকের কক্ষগুলি মীেমাছি যেমন মধুতে ভরিয়ে রাখে-— তা হলে যাই ঘটুক না, কিছুতেই ক্ষতি নেই। তা হলে শূন্যই পূর্ণের ব্যঞ্জনাকে বহন করে। বিশ্বের মর্মকুহর থেকে নিরস্তর ধ্বনিত হচ্ছে ওঁ, হাঁ— আমি আছি। আমাদের অন্তর থেকে আত্মা সুখে দুঃখে উৎসবে শোকে সাড়া দিক ওঁ, হাঁ, সব পূর্ণ পরিপূর্ণ। বালুক, আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে, তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে। TE S ODOo • সুকুমার রায় সুকুমারের লেখনী থেকে যে অবিমিশ্র হাস্যরসের উৎসধারা বাংলা সাহিত্যকে অভিষিক্ত করেছে। তা অতুলনীয়। র্তার সুনিপুণ ছন্দের বিচিত্র ও স্বচ্ছন্দ গতি, তীর ভাবসমাবেশের অভাবনীয় অসংলগ্নতা পদে পদে চমৎকৃতি আনে। র্তার স্বভাবের মধ্যে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির গান্তীর্য ছিল সেইজন্যেই তিনি তার বৈপরীত্য এমন খেলাচ্ছলে দেখাতে পেরেছিলেন। বঙ্গসাহিতো বাঙ্গ