পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষরক্ষণ S&O বেরিয়ে যাচ্ছে— তার পর তুমি কী করবে বলে দেখি। রোসো ভাই, চন্দ্রবাবুর ঐ চাপকান আর শামলাটা পরে নিই, নইলে আমাকে চন্দ্রবাৰু মনে হবে না । [ আপিসের বেশ পরিধান ও ক্ষাস্তর উচ্চহাস্ত ক্ষাস্তমণি, স্বামীর প্রতি পরিহাস অত্যন্ত গৰ্হিত কার্য। পতিব্ৰতা রমণী কদাপি উচ্চহাস্ত করেন না। কোনো কারণে হাত অনিবার্য হইলে সাধবী স্ত্রী প্রথমে স্বামীর অহতি লইয়া পরে বনে অঞ্চল দিয়া নফ্লুত করিয়া ঈষৎতিহাস্থহালিতে পারেন। এই গেল মনুসংহিতা, এবার এসে নবীন কবির গীতিকাব্যে। আমি আপিস থেকে ফিরে এসেছি, এখন তোমার কী কর্তব্য বলো । ক্ষাস্তমণি। প্রথমে তোমার চাপকানটি এবং শামলাটি খুলে দিই, তার পরে জলখাবার— ইন্দু না, তোমার কিছু শিক্ষা হয় নি। আচ্ছা, তুমি তবে চন্দ্রবাৰু সাজে, আমি তোমার স্ত্রী সাজছি— ক্ষান্তমণি । না ভাই, সে আমি পারব না— ইন্দু। আচ্ছা, তবে আর-একবার চেষ্টা করে । বড়োবউ, চাপকানটা খুলে আমার ধুতি-চাদরটা এনে দাও তো । ক্ষান্তমণি । ( উঠিয়া ) এই দিচ্ছি। ইন্দু ও কী করছ ! তুমি ওইখানে হাতের উপর মাথা রেখে বসে থাকো— বলো, 'নাথ, আজি সন্ধেবেলায় কী স্বন্দর বাতাস দিচ্ছে । আজ আর কিছুতে মন লাগছে না, ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে উড়ে যাই ।” ক্ষাস্তমণি । ( যথাশিক্ষিত ) নাথ, আজি সন্ধেবেলায় কী সুন্দর বাতাস দিচ্ছে ! আজ আর কিছুতে মন লাগছে না, ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে উড়ে যাই । ইন্দু। কোথায় উড়ে যাবে? তার আগে আমায় লুচি দিয়ে যাও, ভারি খিদে পেয়েছে— ক্ষাস্তমণি । ( তাড়াতাড়ি উঠিয়া ) এই দিচ্ছি— ইন্দু। এই দেখো, সব মাটি করলে। অস্থানে মনুসংহিতা এসে পড়ে। তুমি যেমন ছিলে তেমনি থাকে, বলো, ‘লুচি ? কই, লুচি তো আজ ভাজি নি। মনে ছিল না । আচ্ছা, লুচি কাল হবে এখন। আজ, এসো, এখানে এই মধুর বাতাসে বসে— চন্দ্র ( নেপথ্য হইতে ) ৷ বড়োবউ ! ইন্দু। ঐ চন্দ্রবাবু আসছেন ! আমাকে দেখতে পেয়েছেন বোধ হল। তুমি বোলে৷ তো ভাই, বাগবাজারের চৌধুরীদের কাদম্বিনী। অামার পরিচয় দিয়ে না, লক্ষ্মীটি, মাথা খাও। [ পলায়ন