পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ లిరి সে কহিল, “আমার প্রভু আপনাকে ডাকিয়াছেন।” পথিকদের কৌতুহলদৃষ্টিপাত অসহ বোধ হওয়াতে তিনি সেখানে আর অধিক বাদামুবাদ না করিয়া গাড়িতে উঠিয়া পড়িলেন। ভাবিলেন, নিশ্চয় ইহার মধ্যে একটা কিছু ভ্ৰম আছে। কিন্তু একটা কোনো দিকে তো চলিতে হইবে— নাহয় এমনি করিয়া ভ্রম দিয়াই এই নূতন জীবনের ভূমিকা আরম্ভ হউক। সেদিন ও মেঘ এবং রৌদ্র আকাশময় পরস্পরকে শিকার করিয়া ফিরিতেছিল ; পথের প্রাস্তবতী বর্ষার জলপ্লাবিত গাঢ়শ্যাম শস্তক্ষেত্র চঞ্চল ছায়ালোকে বিচিত্র হইয়া উঠিতেছিল। হাটের কাছে একটা বৃহৎ রথ পড়িয়া ছিল এবং তাহার অদূরবর্তী মুদির দোকানে একদল বৈষ্ণব ভিক্ষুক গুপিযন্ত্র ও খোলকরতাল যোগে গান গাহিতেছিল— এসো এসো ফিরে এসো— নাথ হে, ফিরে এসো ! আমার ক্ষুধিত তৃষিত তাপিত চিত, বঁধু হে, ফিরে এসো ! গাড়ি অগ্রসর হইয়া চলিল, গানের পদ ক্রমে দূর হইতে দূরতর হইয়া কানে প্রবেশ করিতে লাগিল— ওগো নিষ্ঠুর, ফিরে এসে হে ! আমার করুণ কোমল, এসে । ওগো সজলজলদক্ষিন্ধকান্ত সুন্দর, ফিরে এসো ! গানের কথা ক্রমে ক্ষীণতর অস্ফুটতর হইয়া আসিল, আর বুঝা গেল না। কিন্তু গানের ছন্দে শশিভূষণের হৃদয়ে একটা আন্দোলন তুলিয়া দিল, তিনি আপন মনে গুন্গুন করিয়া পদের পর পদ রচনা করিয়া যোজনা করিয়া চলিলেন, কিছুতে যেন থামিতে পারিলেন না— আমার নিতি-মুখ, ফিরে এসো ! আমার চিরদুখ, ফিরে এসো ! আমার সব-সুখ-দুখ-মন্থন-ধন, অন্তরে ফিরে এসো ! আমার চিরবাঞ্ছিত, এসো ! আমার চিতসঞ্চিত, এসো ! ওহে চঞ্চল, হে চিরন্তন, ভূজবন্ধনে ফিরে এসো ! আমার বক্ষে ফিরিয়া এসো, আমার চক্ষে ফিরিয়া এসো, আমার শয়নে স্বপনে বসনে ভূষণে নিখিল ভুবনে এসো ! আমার মুখের হাসিতে এসো হে, আমার চোখের সলিলে এসো ! আমার আদরে, আমার ছলনে, আমার অভিমানে ফিরে এসো !