পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२68 রবীন্দ্র-রচনাবলী তৃতীয় পরিচ্ছেদ মোহিতমোহনের পূর্ব ইতিহাস হইতে এই একটিমাত্র ঘটনা উল্লেখ করিলাম। রচনা পাছে ‘একঘেয়ে’ হইয়া উঠে এইজন্য অন্যগুলি বলিলাম না । এখন সে-সকল পুরাতন কথা উত্থাপন করিবার আবখকও নাই। এখন সেই বিনোদচন্দ্র নাম স্মরণ করিয়া রাখে, এমন কোনো লোক জগতে আছে কিনা সন্দেহ। এখন মোহিত শুদ্ধাচারী হইয়াছেন, তিনি আহিকতৰ্পণ করেন এবং সর্বদাই শাস্ত্রালোচনা করিয়া থাকেন। নিজের ছোটাে ছোটাে ছেলেদিগকেও যোগাভ্যাস করাইতেছেন এবং বাড়ির মেয়েদিগকে স্বর্য চন্দ্র মরুদগণের দুষ্প্রবেশু অন্তঃপুরে প্রবল শাসনে রক্ষা করিতেছেন। কিন্তু, এককালে তিনি একাধিক রমণীর প্রতি অপরাধ করিয়াছিলেন বলিয়া আজ রমণীর সর্বপ্রকার সামাজিক অপরাধের কঠিনতম দগুবিধান করিয়া থাকেন। ক্ষীরোদার ফঁাসির হুকুম দেওয়ার দুই-এক দিন পরে ভোজনবিলাসী মোহিত জেলথানার বাগান হইতে মনোমতো তরিতরকারি সংগ্ৰহ করিতে গিয়াছেন। ক্ষীরোদ তাহার পতিত জীবনের সমস্ত অপরাধ স্মরণ করিয়া অনুতপ্ত হইয়াছে কি না জানিবার জন্য র্তাহার কৌতুহল হইল। বন্দিনীশালায় প্রবেশ করিলেন। দূর হইতে খুব একটা কলহের ধ্বনি শুনিতে পাইতেছিলেন। ঘরে ঢুকিয়া দেখিলেন ক্ষীরোদা প্রহরীর সহিত ভারি ঝগড়া বাধাইয়াছে। মোহিত মনে মনে হাসিলেন ; ভাবিলেন, স্ত্রীলোকের স্বভাবই এমনি বটে। মৃত্যু সন্নিকট তবু ঝগড়া করিতে ছাড়িবে না। ইহারা বোধ করি যমালয়ে গিয়া যমদূতের সহিত কোন্দল করে। মোহিত ভাবিলেন, যথোচিত ভংসনা ও উপদেশের দ্বারা এখনো ইহার অস্তরে অনুতাপের উদ্রেক করা উচিত। সেই সাধু উদ্দেশ্যে তিনি ক্ষীরোদার নিকটবর্তী হইবামাত্র ক্ষীরোদা সকরুণম্বরে করজোড়ে কহিল, “ওগো জজ বাবু, দোহাই তোমার ! উহাকে বলো, আমার আংটি ফিরাইয়া দেয় ।” প্রশ্ন করিয়া জানিলেন, ক্ষীরোদার মাথার চুলের মধ্যে একটি আংটি লুকানো ছিল— দৈবাৎ প্রহরীর চোখে পড়াতে সে সেটি কাড়িয়া লইয়াছে। মোহিত আবার মনে মনে হাসিলেন। আজ বাদে কাল ফাসিকাষ্ঠে আরোহণ করিবে, তবু আংটির মায়া ছাড়িতে পারে না ; গহনাই মেয়েদের সর্বস্ব ! প্রহরীকে কহিলেন, “কই, আংটি দেখি।” প্রহরী র্তাহার হাতে আংটি দিল । তিনি হঠাৎ যেন জলন্ত অঙ্গার হাতে লইলেন, এমনি চমকিয়া উঠিলেন। আংটির