পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २¢¢ একদিকে হাতির দাতের উপর তেলের রঙে আঁকা একটি গুম্ফশ্বাশ্রশোভিত যুবকের অতি ক্ষুদ্র ছবি বসানো আছে এবং অপরদিকে সোনার গায়ে খোদা রহিয়াছে— বিনোদচন্দ্র । তখন মোহিত আংটি হইতে মুখ তুলিয়া একবার ক্ষীরোদার মুখের দিকে ভালো করিয়া চাহিলেন। চব্বিশ বৎসর পূর্বেকার আর-একটি অশ্রুসজল প্রতিস্থকোমল সলজশঙ্কিত মুখ মনে পড়িল ; সে মুখের সহিত ইহার সাদৃপ্ত আছে। মোহিত আর-একবার সোনার আংটির দিকে চাহিলেন এবং তাহার পরে যখন ধীরে ধীরে মুখ তুলিলেন তখন তাহার সম্মুখে কলঙ্কিনী পতিত রমণী একটি ক্ষুদ্র স্বর্ণাঙ্গুরীয়কের উজ্জল প্রভায় স্বর্ণময়ী দেবীপ্রতিমার মতো উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল। পৌষ ১৩০১ নিশীথে

  • ডাক্তার ! ডাক্তার ”

জালাতন করিল ! এই অর্ধেক রাত্রে— চোখ মেলিয়া দেখি আমাদের জমিদার দক্ষিণাচরণ বাবু। ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া পিঠভাঙা চৌকিটা টানিয়া আনিয়া তাহাকে বসিতে দিলাম এবং উদবিগ্নভাবে তাহার মুখের দিকে চাহিলাম। ঘড়িতে দেখি, তখন রাত্রি আড়াইট । দক্ষিণাচরণ বাৰু বিবর্ণমুখে বিস্ফারিত নেত্ৰে কহিলেন, “আজ রাত্রে আবার সেইরূপ উপল্লব আরম্ভ হইয়াছে— তোমার ঔষধ কোনো কাজে লাগিল না।” আমি কিঞ্চিৎ সসংকোচে বলিলাম, “আপনি বোধ করি মদের মাত্রা আবার বাড়াইয়াছেন।” দক্ষিণাচরণ বাৰু অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “ওটা তোমার ভারি ভ্রম। মদ নহে ; জাভোপাস্ত বিবরণ না শুনিলে তুমি আসল কারণটা অনুমান করিতে পারিবে नां ।” কুলুঙ্গির মধ্যে ক্ষুত্র টিনের ডিবায় মানভাবে কেরোলিন জলিতেছিল, আমি তাহা উস্কাইয়া দিলাম ; একটুখানি আলো জাগিয়া উঠিল এবং অনেকখানি ধোয় বাহির হইতে লাগিল। কোচাখানা গায়ের উপর টানিয়া একখানা খবরের-কাগজ-পাতা প্যাকবাক্সের উপর বসিলাম। দক্ষিণাচরণ বাবু বলিতে লাগিলেন—