পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ &Ꮔ☾ অবশেষে কিরণের দেশে ফিরিবার সময় হইল। সকলেই প্রস্তত হইতে লাগিল ; সতীশও সঙ্গে যাইবে । কিন্তু নীলকাস্তকে কেহ কোনো কথাই বলে না । সে সঙ্গে যাইবে কি থাকিবে, সে প্রশ্নমাত্র কাহারো মনে উদয় হয় না। কিরণ নীলকান্তকে সঙ্গে লইবার প্রস্তাব করিলেন। তাহাতে শ্বাশুড়ি স্বামী এবং দেবর সকলেই একবাক্যে আপত্তি করিয়া উঠিলেন, কিরণও তাহার সংকল্প ত্যাগ করিলেন। অবশেষে যাত্রার দুই দিন আগে ব্রাহ্মণবালককে ডাকিয়া কিরণ তাহাকে স্নেহবাক্যে স্বদেশে যাইতে উপদেশ করিলেন। সে উপরি উপরি কয়দিন অবহেলার পর মিষ্টবাক্য শুনিতে পাইয়া আর থাকিতে পারিল না, একেবারে কাদিয়া উঠিল। কিরণেরও চোখ ছলছল করিয়া উঠিল ; যাহাকে চিরকাল কাছে রাখা যাইবে না তাহাকে কিছুদিন আদর দিয়া তাহার মায়া বসিতে দেওয়া ভালো হয় নাই বলিয়া কিরণের মনে বড়ো অকুতাপ উপস্থিত হইল । সতীশ কাছে উপস্থিত ছিল ; সে অতবড়ো ছেলের কান্না দেখিয়া ভারি বিরক্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, “আরে মোলো, কথা নাই বার্তা নাই, একেবারে কাদিয়াই অস্থির!” কিরণ এই কঠোর উক্তির জন্য সতীশকে ভৎসনা করিলেন। সতীশ কহিল, “তুমি বোঝ না বউদিদি, তুমি সকলকেই বড়ো বেশি বিশ্বাস করে ; কোথাকার কে তাহার ঠিক নাই, এখানে আসিয়া দিব্য রাজার হালে আছে। আবার পুনর্মুষিক হইবার আশঙ্কায় আজ মায়াকান্না জুড়িয়াছে— ও বেশ জানে যে, দুফোটা চোখের জল ফেলিলেই তুমি গলিয়া যাইবে।” নীলকান্ত তাড়াতাড়ি চলিয়া গেল ; কিন্তু তাহার মনটা সতীশের কাল্পনিক মূর্তিকে ছুরি হইয়া কাটিতে লাগিল, ছচ হইয়া বিধিতে লাগিল, আগুন হইয়া জালাইতে লাগিল, কিন্তু প্রকৃত সতীশের গায়ে একটি চিহ্নমাত্র বসিল না, কেবল তাহারই মর্মস্থল হইতে রক্তপাত হইতে লাগিল । কলিকাতা হইতে সতীশ একটি শৌখিন দোয়াতদান কিনিয়া আনিয়াছিল, তাহাতে দুই পাশে দুই ঝিনুকের নৌকার উপর দোয়াত বসানো এবং মাঝে একটা জর্মন রৌপ্যের হাস উন্মুক্ত চঞ্চুপুটে কলম লইয়া পাখা মেলিয়া বসিয়া আছে, সেটির প্রতি সতীশের অত্যন্ত যত্ব ছিল ; প্রায় সে মাঝে মাঝে সিস্কের রুমাল দিয়া অতি সষত্ত্বে সেটি ঝাড়পোচ করিত। কিরণ প্রায়ই পরিহাস করিয়া সেই রৌপ্যহংসের চঞ্চু-অগ্রভাগে অঙ্গুলির আঘাত করিয়া ৰলিতেন ‘ওরে রাজহংস, জন্মি দ্বিজবংশে এমন নৃশংস কেন হলি রে” এবং ইহাই উপলক্ষ করিয়া দেবরে তাহাতে হান্তকৌতুকে বাগযুদ্ধ 5जि७ ।