পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbr8 রবীন্দ্র-রচনাবলী শুনিয়া শশী অভিশাপ দিল, যাহার এতবড়ো মিথ্যা কথা রটনা করিতে পারে তাহাদের মুখে কুষ্ঠ হউক । এই বলিয়া সরোদনে স্বামীর নিকট উপস্থিত হইয়া জনশ্রুতির কথা তাহাকে জানাইল । জয়গোপাল কহিল, “আজকালকার দিনে কাহাকেও বিশ্বাস করিবার জো নাই । উপেন আমার আপন পিসতুতো ভাই, তাহার উপরে বিষয়ের ভার দিয়া আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত ছিলাম— সে কখন গোপনে খাজনা বাকি ফেলিয়া মহল হাসিলপুর নিজে কিনিয়া লইয়াছে, আমি জানিতেও পারি নাই।” শশী আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “নালিশ করিবে না ?” জয়গোপাল কহিল, “ভাইয়ের নামে নালিশ করি কী করিয়া। এবং নালিশ করিয়াও তো কোনো ফল নাই, কেবল অর্থ নষ্ট।” স্বামীর কথা বিশ্বাস করা শশীর পরম কর্তব্য, কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস করিতে পারিল না । তখন এই মুখের সংসার, এই প্রেমের গার্হস্থ্য সহসা তাহার নিকট অত্যন্ত বিকট বীভৎস আকার ধারণ করিয়া দেখা দিল । যে সংসারকে আপনার পরম আশ্রয় বলিয়া মনে হইত, হঠাৎ দেখিল, সে একটা নিষ্ঠুর স্বার্থের ফাদ– তাহদের দুটি ভাইবোনকে চারি দিক হইতে ঘিরিয়া ধরিয়াছে। সে এক স্ত্রীলোক, অসহায় নীলমণিকে কেমন করিয়া রক্ষা করিবে ভাবিয়া কুলকিনারা পাইল না। যতই চিন্তা করিতে লাগিল ততই ভয়ে এবং ঘৃণায় এবং বিপন্ন বালক ভ্রাতাটির প্রতি অপরিসীম স্নেহে তাহার হৃদয় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, সে যদি উপায় জানিত তবে লাটসাহেবের নিকট নিবেদন করিয়া, এমন-কি, মহারানীর নিকট পত্র লিখিয়া তাহার ভাইয়ের সম্পত্তি রক্ষা করিতে পারিত। মহারানী কখনোই নীলমণির বার্ষিক সাত শো আটান্ন টাকা মুনফার হাসিলপুর মহল বিক্রয় হইতে দিতেন না। এইরূপে শশী যখন একেবারে মহারানীর নিকট দরবার করিয়া তাহার পিসতুতে দেবরকে সম্পূর্ণ জবা করিয়া দিবার উপায় চিন্তা করিতেছে তখন হঠাৎ নীলমণির জর আসিয়া আক্ষেপ-সহকারে মূছ৷ হইতে লাগিল । জয়গোপাল এক গ্রাম্য নেটিভ ডাক্তারকে ডাকিল। শশী ভালো ডাক্তারের জন্ত অনুরোধ করাতে জয়গোপাল বলিল, “কেন, মতিলাল মন্দ ডাক্তার কী ” শশী তখন তাহার পায়ে পড়িল, মাথার দিব্য দিল ; জয়গোপাল বলিল, “আচ্ছ, শহর হইতে ডাক্তার ডাকিতে পাঠাইতেছি।” * শশী নীলমণিকে কোলে করিয়া, বুকে করিয়া পড়িয়া রহিল। নীলমণিও তাহাকে