পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૯ર রবীন্দ্র-রচনাবলী ডালের আড়ালে দেখা যাচ্ছে একটি অন্ধ হাতজোড় করে স্বর্ষের বন্দনায় রত। একটি অন্ধ, এক গাছ, এক স্বর্য, আর সোনায়-ঢালা এক স্ববৃহৎ আকাশ ; এমন ছবি আমি কখনো দেখি নি। উপনিষদের সেই প্রার্থনাবাণী যেন রূপ ধরে আমার কাছে দেখা দিলে— তমসে মা জ্যোতির্গময়। কেবল অন্ধ মানুষের নয় অন্ধ প্রকৃতির এই প্রার্থনা, তমসে মা জ্যোতির্গময়— সেই প্লাম গাছের একাগ্র প্রসারিত শাখাপ্রশাখার ভিতর দিয়ে জ্যোতিলোকের দিকে উঠছে। অথচ, আলোয় আলোময়— তারি মাঝখানে অন্ধের প্রার্থনা । কাল শিমোমুরার আর-একটা ছবি দেখলুম। পটের আয়তন তো ছোটো, অথচ ছবির বিষয় বিচিত্র। সাধক তার ঘরের মধ্যে বসে ধ্যান করছে ; তার সমস্ত রিপুগুলি তাকে চারি দিকে আক্রমণ করেছে। অর্ধেক মানুষ অর্ধেক জন্তুর মতো তাদের আকার, অত্যন্ত কুৎসিত, তাদের কেউ বা খুব সমারোহ করে আসছে, কেউ বা আড়ালে আবডালে উকিঝু কি মারছে। কিন্তু, তবু এরা সবাই বাইরেই আছে ; ঘরের ভিতরে তার সামনে সকলের চেয়ে তার বড়ো রিপু বসে আছে ; তার মূতি ঠিক বুদ্ধের মতো । কিন্তু, লক্ষ্য করে দেখলেই দেখা যায়, সে সাচ্চ বুদ্ধ নয়— স্কুল তার দেহ, মুখে তার বঁকা হাসি। সে কপট আত্মম্ভরিতা, পবিত্র রূপ ধরে এই সাধককে বঞ্চিত করছে । এ হচ্ছে আধ্যাত্মিক অহমিকা, শুচি এবং স্বগম্ভীর মুক্তস্বরূপ বুদ্ধের ছদ্মবেশ ধরে আছে ; একেই চেনা শক্ত, এই হচ্ছে অন্তরতম রিপু, অন্ত কদৰ্য রিপুরা বাইরের। এইখানে দেবতাকে উপলক্ষ করে মানুষ আপনার প্রবৃত্তিকে পূজা করছে। আমরা যার আগ্রয়ে আছি, সেই হারা সান গুণী এবং গুণজ্ঞ । তিনি রসে হাস্তে ঔদার্ষে পরিপূর্ণ। সমুদ্রের ধারে, পাহাড়ের গায়ে, তার এই পরম সুন্দর বাগানটি সর্বসাধারণের জন্যে নিত্যই উদঘাটিত । মাঝে মাঝে বিশ্রামগৃহ আছে ; যে-খুশি সেখানে এসে চ খেতে পারে। একটা খুব লম্বা ঘর আছে, সেখানে যারা বনভোজন করতে চায় তাদের জন্তে ব্যবস্থা আছে। হারা সানের মধ্যে কৃপণতাও নেই, আড়ম্বরও নেই, অথচ র্তার চার দিকে সমারোহ আছে। মূঢ় ধনাভিমানীর মতে তিনি মূল্যবান জিনিসকে কেবলমাত্র সংগ্রহ করে রাখেন না ; তার মূল্য তিনি বোঝেন, তার মূল্য তিনি দেন, এবং তার কাছে তিনি সন্ত্রমে আপনাকে নত করতে জানেন। S (t এশিয়ার মধ্যে জাপানই এই কথাটি একদিন হঠাৎ অনুভব করলে ষে, যুরোপ ষেশক্তিতে পৃথিবীতে সর্বজয়ী হয়ে উঠেছে একমাত্র সেই শক্তির দ্বারাই তাকে ঠেকানো