পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

oԳօ রবীন্দ্র-রচনাবলী অনেক ধনী আছে যারা নিজের ভোগেই নিজের অর্থের ব্যয় ও অপব্যয় করে থাকে। সাধারণের দাবি তাদের ভোগের তহবিলে যদি ভাঙন ধরাতে পারে তাতে দুঃখের কথা কিছুই নেই। অবকাশ পদার্থটা হচ্ছে সময়ধন— সংসারী এই ধনটাকে নিজের ঘরসংসারের চিস্তায় ও কাজে লাগায়, আর কুঁড়ে যে সে কোনো কাজেই লাগায় না। এই সংসারী বা কুঁড়ের অবকাশের উপর লোকহিতের দোহাই দিয়ে উপদ্রব করলে দোষের হয় না। আমার অবকাশের অনেকটা অংশ আমি কুঁড়েমিতেই খাটাই, বাইরে থেকে কেউ কেউ এমন সন্দেহ করে। এ কথাটা জানে না যে, কুঁড়েমিটাই আমার কাজের প্রধান অঙ্গ। পেয়ালার যতটা চীনেমাটি দিয়ে গড়া ততটাই তার প্রধান অংশ নয়, বস্তুত সেটাই তার গৌণ ; যতটা তার ফণক ততটাই তার মুখ্য অংশ। ওই ফাকটাই রসে ভরতি হয়, পোড়া চীনেমাটি উপলক্ষ মাত্র। ঘরের খুটিটা যেমন, গাছ ঠিক তেমন জিনিস নয়। অর্থাৎ, সে কেবলমাত্র নিজের তলাটার মাটিতেই দাড়িয়ে থাকে না। তার দৃশ্যমান গুড়ি যতটুকু মাটি জুড়ে থাকে তার অদৃশু শিকড় তার চেয়ে অনেক বেশি মাটি অধিকার করে ব’লেই গাছটা রসের জোগান পায়। আমাদের কাজও সেই গাছের মতো ; ফণকা অবকাশের তলা থেকে গোপনে সে রস আদায় করে নেয়। দশে মিলে তার সেই বিধিদত্ত অবকাশের লাখেরাজের উপর যদি খাজনা বসায় তা হলে তার সেই কাজটাকেই নিঃস্ব করা হতে থাকে। এইজন্যেই দেশের সমস্ত সাময়িক পত্রে হরির লুঠের জোগান দেবার জন্যে অন্য কোনো দেশেই কবিকে নিয়ে এমনতরো টানাহেঁচড়া করে না । আমাদের দেশের গার্হস্থ্য ব্যাকরণে যারা কর্তা তাদের প্রধান পরিচয় ক্রিয়াকর্মে । লোকে তাদের দশকর্ম বলে। সেই গার্হস্থ্যে আবার এমন সব লোক আছে যারা অকৰ্মা ; তারা কেবল ফাইফরমাশ খাটে। কাজের চেয়ে অকাজে তাদের বেশি দরকার। অর্থাৎ, তাস খেলবার যখন জুড়ি না জোটে তখন তাদের ডাক পড়ে, আর দূর-সম্পর্কের জ্যাঠাইমার গঙ্গাযাত্রার সময় তারাই প্রধান সহায় । আমাদের শাস্ত্রে গৃহস্থ-আশ্রমের উপর আরণ্য-আশ্রমের বিধি। বর্তমানকালে এই শেষের আশ্রম বাদ পড়েছে ; আরণ্য-আশ্রম নেই, কিন্তু তার জায়গা জুড়েছে সাধারণ্য-আশ্রম। এখন দেশে আরণ্যক পাওয়া যায় না, কিন্তু সাধারণ্যকের সংখ্যা কম নয়। র্তারা পাব্লিক নামক বৃহৎ সংসারের ঘোরতর সংসারী। শেষোক্ত সংসারেও দুই দলের লোক আছেন। একদল দশকর্ম, আর-একদল অকৰ্মা ; র্যাদের ইংরেজিতে লীডার বলে আমি তাদের বলতে চাই কর্তব্যক্তি। কেউ বা বড়ো-কর্তা, কেউ বা মেজো-কর্তা, কেউ বা ছোটাে-কর্তা। এই কর্তারা নিত্য-সভা,