পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बांज़ैौ Wory সমাপ্তি নেই, এইজন্তেই মুসমাপ্তির স্বধারসের জন্তে তার অধ্যবসায়ের মধ্যে একটা প্রবল তৃষ্ণ আছে। মেয়েদের হৃদয়ের মাধুর্য এই রসই তাকে পান করায় । পুরুষের সংসারে কেবলই চিস্তার দ্বন্দ্ব, সংশয়ের দোলা, তর্কের সংঘাত, ভাঙাগড়ার আবর্তন— এই নিরস্তর প্রয়াসে তার ক্ষুব্ধ দোলায়িত চিত্ত প্রাণলোকের সরল পরিপূর্ণতার জন্তে ভিতরে ভিতরে উংস্থক হয়ে থাকে। মেয়েদের মধ্যে সেই প্রাণের লীলা । বাতাসে লতার আন্দোলনের মতে, বসন্তের নিকুঞ্ছে ফুল ফোটবার মতোই এই লীলা সহজ, স্বতঃস্ফূর্ত ; চিস্তাক্লিষ্ট চিত্তের পক্ষে পূর্ণতার এই প্রাণময়ী মূতি নিরতিশয় রমণীয়। এই স্বসমাপ্তির সৌন্দর্য, এই প্রাণের সহজ বিকাশ পুরুষের মনে কেবল ষে তৃপ্তি আনে তা নয়, তাকে বল দেয়, তার স্বষ্টিকে অভাবনীয় রূপে উদঘাটিত করে দিতে থাকে। আমাদের দেশে এইজন্তে পুরুষের সাধনায় মেয়েকে শক্তি বলে স্বীকার করে। কর্মের প্রকাগু ক্ষেত্রে এই শক্তিকে দেখি নে ; ফুলকে দেখি প্রত্যক্ষ কিন্তু যে গৃঢ় শক্তিতে সেই ফুল ফোটায় তাকে কোথাও ধরা-ছোওয়া যায না । পুরুষের কীতিতে মেয়ের শক্তি তেমনি নিগৃঢ়। ২৯শে সেপ্টেম্বর ১৯২৪ ষে মেয়েটি আমাকে শুভ-ইচ্ছা জানিয়ে চিঠি লিখেছিল তার চিঠিতে একটি অনুরোধ ছিল, “আপনি ডায়ারি লিখবেন।” তখনই জবাব দিলুম, “না, ডায়ারি লিখব না।” কিন্তু, মুখ দিয়ে একটা কথা বেরিয়ে গেছে ব’লেই ষে সেই কথাটা অটল সত্যের গৌরব লাভ করবে এতবড়ে অহংকার আমার নেই। তার পর চব্বিশে তারিখে জাহাজে উঠলুম। বাদলার হাওয়া আরো ষেন রেগে উঠল ; সে যেন একটা অদৃপ্ত প্রকাও সাপের মতো জাহাজটার উপর ক্ষণে-ক্ষণে-ছোবল মেরে ফোস ফোস করতে লাগল। যখন দেখলুম দুৰ্দৈবের ধাক্কায় মনটা হার মানবার উপক্রম করছে তখন তেড়ে উঠে বললুম, “না, ডায়ারি লিখবই।” কিন্তু, লেখবার আছে কী । কিছুই না, যা-ত লিখতে হবে। সকল লেখার সেরা হচ্ছে ষা-তা লেখা । যথেচ্ছাচারের অধিকার রাজার অধিকার । বিশেষ কোনো-একজনকে চিঠি লেখবার একটা প্রচ্ছন্ন বীথিক যদি সামনে পাওয়া যেত তা হলে তারই নিভৃতছায়ার ভিতর দিয়ে আমার নিরুদ্দেশ বাণীকে অভিসারে পাঠাতুম। কিন্তু সে বীথিক আজ নেই। তাই অপরিচিত ক্যাবিনে আলো জেলে নিজের কাছেই নিজে বকতে বসলুম। আলাপের এই অদ্বৈতরূপ আমার পছন্দসই নয়। সংসারে যখন মনের মতো দ্বৈত দুর্লভ হয়ে ওঠে তখনই মানুষ অদ্বৈতসাধনায়