পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী . 8 ۹ه বৈচিত্র্য প্রচুর, ভোজের উপকরণ বিস্তর— তাই পরিবেশনকর্মের অভ্যাস অতি আশ্চর্য ক্ষত হয়ে উঠেছে। পরিবেশনের যন্ত্রটাতে খুবই প্রবল জোরে দম দেওয়া হয়েছে। বেটা এই পরিবেশনে দেখা গেলু পাশ্চাত্যের সমস্ত কর্মচালনার মধ্যেই সেই ক্ষিপ্রবেগ । 鄂 যে বস্তু বাহিরের ব্যবহারের জন্য তার গতির ছন্ ম দিয়ে অনেকদূর পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলা চলে। কিন্তু আমাদের প্রাণের, আমাদের হৃদয়ের ছন্দের একটা স্বাভাবিক লয়। আছে ; তার উপরে দ্রুত প্রয়োজনের জবরদস্তি খাটে না । দ্রুত-চলাই যে দ্রুত-এগনো সে কথা সত্য হতে পারে কলের গাড়ির পক্ষে, মানুষের পক্ষে না । মানুষের চলার সঙ্গে হওয়া আছে ; সেই চলাতে হওয়াতে মিল ক'রে চলাই মানুষের চলা, কলের গাড়ির সে উপসর্গ নেই। আপিসের তাগিদে মুহূর্তের মধ্যে এক গ্রাসের জায়গায় চার গ্রাস খাওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু, সেই চার গ্রাস ঘড়ি ধরে হজম করা কলের মনিবের হকুমে হতে পারে না। গ্রামোফোনের কান যদি মলে দেওয়া যায় তবে যে গান গাইতে চার মিনিট লেগেছিল তাকে শুনতে আধ মিনিটের বেশি না লাগতে পারে, কিন্তু সংগীত হয়ে ওঠে চীংকার। রসভোগ করবার জন্যে রসনার নিজের একটা নির্ধারিত সময় আছে ; সন্দেশকে যদি কুইনিনের বড়ির মতো টপ করে গৈলা যায় তা হলে বন্ধটাকে পাওয়া যায়, বস্তুর রস পাওয়া যায় না। তীরবেগে বাইসিকল ছুটিয়ে যদি পদাতিক বন্ধুর চাদর ধরি তা হলে বাইসিকূলের জয়পতাকা হাতে আসবে, কিন্তু বন্ধুকে বুকে পাবার উপায় সেটা নয় ; কলের বেগ বাইরের দরকারে কাজে লাগে, অস্তরের দাবি মেটাবার বেলায় অস্তরের ছন্দ না মানলে চলে না । 品r বাইরের বেগ অন্তরের ছদ্মকে অত্যন্ত বেশি পেরোয় কখন। যখন বাহ প্রয়োজনের বড়ো বাড় বাড়ে। তখন মানুষ পড়ে পিছিয়ে, কলের সঙ্গে সে তাল রাখতে পারে না । যুরোপে সেই মানুষ-ব্যক্তিটি দিনে দিনে বহু দূরে পড়ে গেল ; কল গেল এগিয়ে ; তাকেই সেখানকার লোকে বলে অগ্রসরতা, প্রোগ্রেস। সিদ্ধি, যাকে ইংরেজিতে বলে সাকসেস. তার বাহন যত দৌড়ে চলে ততই ফল পায়। যুরোপের দেশে দেশে রাষ্ট্রনীতির যুদ্ধনীতির বাণিজ্যনীতির তুমুল ঘোড়দৌড় চলছে জলে স্থলে আকাশে। সেখানে বাহ প্রয়োজনের গরজ অত্যন্ত বেশি হয়ে উঠল, তাই মন্থয়ত্বের ডাক শুনে কেউ সৰুর করতে পারছে না। . বীভৎস সর্বভুক্‌ , পেটুকতার উদ্যোগে পলিটিক্স নিয়ত ব্যস্ত। তার গীট-কাটা ব্যবসায়ের পরিধি পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে। পূর্বকালে যুদ্ধবিগ্রহের পদ্ধতিতে ধর্মবুদ্ধি যেখানে মাঝে মাঝে বাধা খাড় করে রেখেছিল, ডিপ্লমাসি সেখানে আজ লাফ-মার হার্ড ল রেস্ । খেলে চলেছে। সবুর সয় না ৰে! বিষবায়ুবাণ যুদ্ধের অস্ত্ররূপে যখন এক পক্ষ