পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8や* * রবীন্দ্র-রচনাবলী ঈশোপনিষদে বলেছেন, হে পুষন, তোমার ঢাকা খুলে ফেলো, সত্যের মুখ দেখি ; আমার মধ্যে যিনি সেই পুরুষ তোমার মধ্যে। এই বাদলার অন্ধকারে আজ আমার মধ্যে যে ছায়াচ্ছন্ন বিষাদ সে ওই ব্যাকুলতারই একটি রূপ। সেও বলছে, হে পূষন, তোমার ওই ঢাকা খুলে ফেলো, তোমার জ্যোতির মধ্যে আমার আত্মাকে উজ্জল দেখি। অবসাদ দূর হোক। আমার চিত্তের বঁশিতে তোমার আলোকের নিশ্বাস পূর্ণ করো– সমস্ত আকাশ আনন্দের গানে জাগ্রত হয়ে উঠুক। আমার প্রাণ-ষে তোমার আলোকেরই একটি প্রকাশ, আমার দেহও তাই। আমার চিত্তকে তোমার জ্যোতিরঙ্গুলি যখনই স্পর্শ করে তখনই তো ভূভূর্বস্ব: দীপ্যমান হয়ে ওঠে। মেঘে মেঘে তোমার যেমন নানা রং আমার ভাবনায় ভাবনায় তোমার তেজ তেমনি সুখদুঃখের কত রং লাগিয়ে দিচ্ছে। একই জ্যোতি বাইরের পুষ্পপল্লবের বর্ণে গন্ধে এবং অস্তরের রাগে অনুরাগে বিচিত্র হয়ে ঠিকরে পড়ছে। প্রভাতে সন্ধ্যায় তোমার গান দিকে দিগন্তে বেজে ওঠে ; তেমনি তোমারই গান আমার কবির চিত্ত গলিয়ে দিয়ে ভাষার স্রোতে ছন্দের নাচে বয়ে চলল। এক জ্যোতির এত রং, এত রূপ, এত ভাব, এত রস ! অন্ধকারের সঙ্গে নিত্য ঘাতে প্রতিঘাতে তার এত নৃত্য, এত গান, তার এত ভাঙা, এত গড়া— তারি সারথ্যে যুগযুগান্তরের এমন রথযাত্ৰা ! তোমার তেজের উৎসের কাছে পৃথিবীর অন্তর্গৃঢ় প্রার্থনাই তো গাছ হয়ে, ঘাস হয়ে আকাশে উঠছে, বলছে, অপাৰ্বণু— ঢাকা খুলে দাও । এই ঢাকা খোলাই তার প্রাণের লীলা, এই ঢাকা খোলা থেকেই তার ফুল ফল। এই প্রার্থনাই আদিম জীবাণুর মধ্যে দিয়ে আজ মানুষের মধ্যে এসে উপস্থিত। মানুষের প্রাণের ঘাট পেরিয়ে মানুষের চিত্তের ঘাটে পাড়ি দিয়ে চলল। মানুষের ইতিহাস বলছে, অপাৰ্বণু, ঢাকা খোলে। জীব বলছে, আমার মধ্যে ষে-সত্য আছে তার জ্যোতির্ময় পূর্ণস্বরূপ দেখি। হে পুষন, হে পরিপূর্ণ, তোমার হিরন্ময় পাত্রের মুখের আবরণ খুচুক, তার অস্তরের রহস্ত প্রকাশিত হোক— সেই রহস্য আমার মধ্যে তোমার মধ্যে একই । প্রাণ যখন ক্লাস্ত হয় তখন বলি, স্থখদু:খের দ্বন্দ্ব দূর হয়ে যাক, স্বষ্টির লীলাতরঙ্গে আর উঠতে নামতে পারি নে ; পাত্রের ঢাকা কেবল খুলে যাক তা নয় পাত্রটাই যাক ভেঙে, একের বক্ষে বিরাজ না করে একের মধ্যে বিলুপ্ত হই। ভারতবর্ষে এই প্রার্থনা ক্ষণে ক্ষণে শুনতে পাই। কিন্তু আমি বলি, অপাৰ্বণু , সত্যের মুখ খুলে দাও— এককে অস্তরে বাহিরে ভালো করে দেখি, তা হলেই অনেককে ভালো করে বুঝতে পারব। গানের মধ্যে আগাগোড়া ষে একটি আনন্দময় এক আছে তাকে যতক্ষণ বুঝতে না পারি ততক্ষণ মুরের সঙ্গে