পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& *२ রবীক্স-রচনাবলী জিনিস চিনি, এই ছোটো দ্বীপটি থেকে দেশবিদেশে চালান যাচ্ছে। এমন এক কাল ছিল, পৃথিবীতে চিনি বিতরণের ভার ছিল ভারতবর্ষের। আজ এই জাভার হাট থেকে চিনি কিনে বৌবাজারের ভীমচন্দ্র নাগের সম্বেশ তৈরি হয়। ধরণী স্বভাবত কী নাম করেন আজকাল তারই উপরে ভরসা রাখতে গেলে ঠকতে হয়, মানুষ কী আদায় ক’রে নিতে পারে এইটেই হল আসল কথা । গোরু আপনা-আপনি ষে-ফুধটুকু দেয় তাতে যজ্ঞের আয়োজন চলে না, গৃহস্থের শিশুদের পেট ভরিয়ে বৌবাজারের দোকানে গিয়ে পৌছবার পূর্বেই কেড়ে পৃষ্ঠ হয়ে যায়। যারা ওস্তাদ গোয়ালা তারা জানে কিরকম খোরাকি ও প্রজননবিধির দ্বারা গোরুর দুধ বাড়ানো চলে। এই খামল দ্বীপটি ওলন্দাজদের পক্ষে ধরণী-কামধেনুর দুধভরা বাটের মতো । তারা জানে, কোন প্রণালীতে এই বঁটি কোনোদিন একফোটা শুকিয়ে না যায়, নিয়ত দুধে ভরে থাকে ; সম্পূর্ণ দুইয়েনেবার কৌশলটাও তাদের আয়ত্ত । আমাদের কর্তৃপক্ষও উাদের গোয়ালবাড়ি ভারতবর্ষে বসিয়েছেন, চা আর পাট নিয়ে এতকাল তাদের হাট গুলজার হল ; কিন্তু, এদিকে আমাদের চাষের খেত নিজীব হয়ে এসেছে, সঙ্গে সঙ্গে জিব বেরিয়ে পড়ল চাষিদের । এতকাল পরে আজ হঠাৎ তাদের নজর পড়েছে আমাদের ফসলহীন দুর্ভাগ্যের প্রতি । কমিশন বসেছে, তার রিপোর্টও বেরোবে। দরিদ্রের চাকাভাঙা মনোরথ রিপোর্টের টানে নড়ে উঠবে কি না জানি নে, কিন্তু রাস্ত বানাবার কাজে যে-সব রাজমজুর লাগবে মজুরি মিলতে তাদের অস্থবিধে হবে না। মোট কথা, ওলন্দাজরা এখানে কৃষিক্ষেত্রে' খুব ওস্তাদি দেখিয়েছে ; তাতে এখানকার লোকের অন্নের সংস্থান হয়েছে, কতৃপক্ষেরও ব্যাবসা চলছে ভালো। এর মধ্যে তত্ত্বটা হচ্ছে এই যে, দেশের প্রতি প্রেম জানাবার জন্তে দেশের জিনিস ব্যবহার করব, এটা ভালো কথা ; কিন্তু দেশের প্রতি প্রেম জানাবার জন্যে দেশের জিনিস-উৎপাদনের শক্তি বাড়াতে হবে, এটা হল পাকা কথা । এইখানে বিস্তার দরকার ; সেই বিস্তা বিদেশ থেকে এলেজুড়াকে গ্রহণ করলে আমাদের জাত যাবে না, পরস্তু জান রক্ষা হবে। স্বরবায়াতে তিন দিন আমরা যার বাড়িতে অতিথি ছিলেম তিনি স্বরকর্তার রাজবংশের একজন প্রধান ব্যক্তি, কিন্তু তিনি আপন অধিকার ইচ্ছাপূর্বক পরিত্যাগ করে এই শহরে এসে বাণিজ্য করছেন । চিনি রপ্তানির কারবার , তাতে র্তার প্রভূত মুনফা। চমৎকার মানুষটি, প্রাচীন অভিজাতকুলৰোগ্য মর্যাদা ও সৌজন্তের অবতার। র্তার ছেলে আধুনিক কালের শিক্ষা পেয়েছেন ; বিনীত, নম্র, প্রিয়দর্শন— ভারই উপরে আমাদের অতিথিপরিচর্যার ভার। বড়ো ভয় ছিল, পাছে অবিশ্রাম অভ্যর্থনার পীড়নে আরাম-অবকাশ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু, সেই অত্যাচার থেকে রক্ষা পেয়েছিলেম।