পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

थॉैौ । &e , , . " - S8 ፵ I বেীমা, শেষ চিঠিতে তোমাকে এখানকার নাচের কথা লিখেছিলুম, ভেবেছিলুম, নাচ সম্বন্ধে শেষ কথা বলা হয়ে গেল। এমন সময়ে সেই রাত্রে আর-এক নাচের বৈঠকে ডাক পড়ল। সেই অতিপ্রকাও মণ্ডপে আসর ; বহুবিস্তীর্ণ শ্বেত পাথরের ভিত্তিতলে বিছান্দীপের আলো ঝলমল করছে। আহারে বসবার জাগে নাচের একটা পালা আরম্ভ হল— পুরুষের নাচ, বিষয়টা হচ্ছে ইন্দ্ৰজিতের সঙ্গে হকুমানের লড়াই। এখানকার রাজার ভাই ইন্দ্ৰজিত সেজেছেন ; ইনি নৃত্যবিস্তায় ওস্তাদ। আশ্চর্ষের বিষয় এই যে, বয়ঃপ্রাপ্ত অবস্থায় ইনি নাচ শিখতে আরম্ভ করেছেন । অল্প বয়সে সমস্ত শরীরটা যখন নম্র থাকে, হাড় যখন পাকে নি, সেই সময়ে এই নাচ শিক্ষাকরা দরকার ; দেহের প্রত্যেক গ্রন্থি যাতে অতি সহজে সরে, প্রত্যেক মাংসপেশিতে যাতে অনায়ালে জোর পৌঁছয়, এমন অভ্যাস করা চাই। কিন্তু, নাচ সম্বন্ধে রাজার ভাইয়ের স্বাভাবিক প্রতিভা থাকাতে র্তাকে বেশি চেষ্টা করতে হয় নি । হকুমান বনের জন্তু, ইন্দ্ৰজিত স্বশিক্ষিত রাক্ষস, দুইজনের নাচের ভঙ্গীতে সেই ভাবের পার্থক্যটি বুঝিয়ে দেওয়া চাই, নইলে রসভঙ্গ হয়। প্রথমেই যেটা চোখে পড়ে সে হচ্ছে এদের সাজ। সাধারণত আমাদের যাত্রায় নাটকে হুকুমানের হনুমানত্ব খুব বেশি করে ফুটিয়ে তুলে দর্শকদের কৌতুক উত্ৰেক করবার চেষ্ট হয়। এখানে হকুমানের আভাসটুকু দেওয়াতে তার মমুন্যত্ব আরো বেশি উজ্জল হয়েছে। হকুমানের নাচে লম্ফঝঙ্ক দ্বারা তার বানরস্বভাব প্রকাশ করা কিছুই কঠিন হত না, আর সেই উপায়ে সমস্ত সভা অনায়াসেই অট্টহাস্তে মুখরিত হয়ে উঠত, কিন্তু কঠিন কাজ হচ্ছে হকুমানকে মহত্ব দেওয়া । বাংলাদেশের অভিনয় প্রভৃতি দেখলে বোঝা যায় যে, হকুমানের বীরত্ব, তার একনিষ্ঠ ভক্তি ও আত্মত্যাগের চেয়ে— তার লেজের দৈর্ঘ্য, তার পোড়ামুখের ভঙ্গিমা, তার বানরত্বই বাঙালির মনকে বেশি করে অধিকার করেছে। আমাদের পশ্চিমাঞ্চলে তার উলটো । এমন-কি, হনুমানপ্রসাদ নাম রাখতে বাপমায়ের দ্বিধা বোধ হয় না। বাংলায় হনুমানচন্দ্র বা হকুমানেন্দ্র আমরা কল্পনা করতে পারি নে। এ দেশের লোকেরাও রামায়ণের হনুমানের বড়ো দিকটাই দেখে। নাচে হকুমানের রূপ দেখলুম— পিঠ বেয়ে মাখ পর্যস্ত লেজ, কিন্তু এমন একটা শোভনভঙ্গী ষে দেখে হাসি পাবার জো নেই। আয়-সমস্তই মানুষের মতো । মুকুট থেকে পা পর্যন্ত ইন্দ্ৰজিতের সাজসজ্জা একটি স্বাক্ষর ছবি । তার পরে দুইজনে নাচতে নাচতে লড়াই; সঙ্গে সঙ্গে ঢাকেঢোলে কাসরে-ঘণ্টায় নানাবিধ যন্ত্রে ও মাঝে মাঝে বহু মানুষের কষ্ঠের গর্জনে সংগীত