পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१९९ রবীন্দ্র-রচনাবলী विजिकैम कजTांनीब्रांश রানী, জাভার পালা সাঙ্গ করে যখন বাটাভিয়াতে এসে পৌছলুম, মনে হল খেয়া ঘাটে এসে দাড়িয়েছি এবার পাড়ি দিলেই ওপারে গিয়ে পৌছব নিজের দেশে। মনট যখন ঠিক সেই ভাবে ডানা মেলেছে এমন সময় ব্যাংকক্‌ থেকে আরিয়ামের টেলিগ্রাম এল যে, সেখানে আমার ডাক পড়েছে, আমার জন্তে অভ্যর্থনা প্রস্তুত । আবার হাল ফেরাতে হল। সারাদিন খাটুনির পর আস্তাবলের রাস্তায় এসে গাড়োয়ান যখন নতুন আরোহীর ফরমাশে ঘোড়াটাকে অন্ত রাস্তায় বাক ফেরায় তখন তার অন্তঃকরণে ষে-ভাবের উদয় হয় আমার ঠিক সেইরকম হল। ক্লাস্ত হয়েছি, এ কথা মানতেই হবে। এমন লোক দেখেছি (নাম করতে চাই নে ) ভাগ্য অনুকূল হলে যারা টুরিস্টুব্ৰত গ্রহণ করে চিরজীবন অসাধ্য সাধন করতে পারত, কিন্তু তারা হয়তো পটলডাঙার কোন-এক ঠিকানায় ধ্রুব হয়ে গৃহকর্মে নিযুক্ত। আর, আমি দেহটাকে কোণে বেঁধে মনটাকে গগনপথে ওড়াতে পারলে আরাম পাই অথচ সাত ঘাটের জল আমাকে খাওয়াচ্ছে। অতএব, চললুম খামের পথে, ঘরের পথে নয়। এখানকার যে-সরকারি জাহাজে সিঙাপুরে যাবার কথা সে-জাহাজে অত্যস্ত ভিড়, তাই একটি ছোটো জাহাজে আমি আর স্বরেন স্থান করে নিয়েছি। কাল শুক্রবার সকালে রওনা হওয়া গেছে। সুনীতি ও ধীরেন একদিনের জন্য পিছিয়ে রয়ে গেল ; কেননা, কাল রাত্রে ভারতীয় সভ্যতা সম্বন্ধে স্থনীতির একটা বক্তৃতার ব্যবস্থা ছিল । জাভার পণ্ডিতমণ্ডলীর মধ্যে মুনীতি যথেষ্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন । তার কারণ, তার পাণ্ডিত্যে কোনো ফাকি নেই, যা-কিছু বলেন তা তিনি ভালো করেই জানেন। আমাদের জাহাজ দুটি দ্বীপ ঘুরে যাবে, তাই দুদিনের পথে তিন দিন লাগবে। এই জায়গাটাতে বিশ্বকৰ্মার মাটির ব্যাগ ছিড়ে অনেকগুলো ছোটো ছোটো দ্বীপ সমূত্রের মধ্যে ছিটকে পড়েছে। সেগুলো ওলন্দাজদের দখলে। এখন ষে-দ্বীপে জাহাজ নোঙর ফেলেছে তার নাম বিলিটন। মানুষ বেশি নেই ; আছে টিনের খমি, আর আছে লেইসব খনির ম্যানেজার ও মজুর। আশ্চর্য হয়ে বসে বসে ভাবছি, এরা সমস্ত পৃথিবীটাকে কিরকম দোহন করে নিচ্ছে । একদিন এরা সব বীকে বীকে পালের জাহাজে চড়ে অজানা সমূত্রে বেরিয়ে পড়েছিল। পৃথিবীটাকে ঘুরে ঘুরে দেখে নিলে, চিনে নিলে, মেপে নিলে। সেই জেনে নেওয়ার স্বদীর্ঘ ইতিহাস কত সাংঘাতিক সংকটে আকীর্ণ। মনে মনে ভাবি, ওদের স্বদেশ থেকে অতি দূর সমুদ্রকুলে এই-সব দ্বীপে যেদিন ওরা প্রথম