পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২০ রবীন্দ্র-রচনাবলী বিক্রম। কন্দপ সেবার এসেছিলেন অপরাধীর মতে লুকিয়ে— এবার তাকে ডাকব প্রকাশ্বে, আসবেন দেবতার যোগ্য নিঃসংকোচে– মাথা তুলে ধ্বজা উড়িয়ে । বিপদের ভয় বিপদ ডেকে আনে | দেবদত্ত। মহারাজ, আদিকাল থেকেই ওই দুই দেবতার মধ্যে বিরোধ। বিক্রম । ক্ষতি তাতে মহিষেরই। এক দেবতা আর-এক দেবতার প্রসাদ থেকে মাহুবকে বঞ্চিত করেন । ব্রাহ্মণ, শাস্ত্র মিলিয়ে চিরদিন তোমরা দেবপূজার ব্যাবসা করে এসেছ তাই দেবতার তোমরা কিছুই জান না । দেবদত্ত । সে কথা ঠিক, দেবতার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পুথির থেকে । শ্লোকের ভিড় ঠেলে মরি ; দক্ষিণা পাই, কিন্তু ওঁদের কাছে ঘেঁষবার সময়ই পাই নে । বিক্রম। আমার মানকেতু অশাস্ত্রীয় ; অনুষ্টভ-ত্রিমুভের বন্ধন মানেন না। তিনি প্রলয়েরই দেবতা । রুদ্রভৈরবের সঙ্গেই তার অস্তরের মিল— পিনাক ছদ্মবেশ । ধরেছে তার পুষ্পধন্থতে । দেবদত্ত। মহারাজ, ওই দেবতাটিকে যথাসাধ্য পাশ কাটিয়ে চলবারই চেষ্টা করেছি। অভিালে যেটুকু জানাশোনা ঘটেছে তাতে ভৈরবের সঙ্গে অন্তত বেশেভূষায় ওঁর যথেষ্ট মিল দেখতে পাই নি । বিক্রম । তার কারণ, এ পর্যন্ত রতি নিজেরই বেশের অংশ দিয়ে কন্দপকে সাজিয়েছে। তাকে রাঙিয়েছে নিজেরই কজ্জলের কালিমায়, কুঙ্কুমের রক্তিমায়, নীল কঞ্চলিকার নীলিমায়— উনি রমণীর লালনে লালিত্যে আচ্ছন্ন আবিষ্ট, তাই তো বজ্রপাণি ইন্দ্রের সভায় উনি লজ্জিতভাবে চরের বৃত্তি করেন । রুজের পৌরুষের আগুনে তাই তো ওঁকে দগ্ধ করেছিল । দেবদত্ত। সে ইতিহাস তো চুকে গেছে। আবার সেই পোড় দেবতাকে নিয়ে কেন এই উপসর্গ। পুনর্বার ওঁকে পোড়াতে হবে নাকি । বিক্রম। না, তাকে মৃত্যুর ভিতর দিয়েই বাচাতে হবে— সেজন্তে বীরের শক্তি চাই। তোমাদের ভৈরবের স্তব সম্পূর্ণ হবে না আমাদের মীনকেতুর স্তব যদি তার সঙ্গে না যোগ করি । :* , ভস্ম-অপমানশষ্য ছাড়ো, পুষ্পধন্থ, রুদ্রবহ্নি হতে লহ জলজটি তন্থ । যাহা মরণীয় যাক মরে, জাগো অবিস্মরণীয় ধ্যানমূর্তি ধরে ।