পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 o . রবীন্দ্র-রচনাবলী ত্ৰিবেদী। দেখছ না, মধুকরের ওজন আর শোনা যাচ্ছে না। সংস্কৃত শৌরসেনী মাগধী অধমাগধী মহারাষ্ট্রী পারসিক যাবনিক নানা ভাষায় আজ অভ্যাস চলছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে মকরকেতুর সকল দেশের সকল ভাষাতেই পাণ্ডিত্য। কালিন্দী । কিন্তু অনুচ্চারিত ভাষাই তিনি সব চেয়ে ভালো বোঝেন । দাদাঠাকুর, একটা কথার উত্তর দাও । মকরকেতুর পূজার বিধান পেয়েছ কোন বেদে । ত্রিবেদী। চুপ চুপ। কি কণ্ঠস্বরই পেয়েছ তোমরা পুরাঙ্গনারা । কালিন্দী। অরলিক, বয়স হয়েছে বলে কি কণ্ঠস্বরের বিচারবুদ্ধিটাও খোয়াতে হবে। তোমাদের কবি যে কোকিলের সঙ্গে এই কণ্ঠের তুলনা করেন। ত্রিৰেদী। অন্যায় করেন না । কোনো কথা গোপনে বলবার অভ্যাস ওই পাখিটার নেই । কালিন্দী। দাদাঠাকুর, তোমার সঙ্গে গোপন কথা বলবার মতো মনের ভাব আমার নয়। শাস্ত্রের বিচার চাই । এরা বলছিল, পুরাণে অতন্ত্রর নেই তন্থ, আবার বেদে নেই তার নামগন্ধ— বাকি রইল কী । তা হলে পূজাট হবে কাকে নিয়ে। ত্ৰিবেদী। আরে চুপ চুপ— স্বরটাকে আর-এক সপ্তক নামিয়ে আনে। মঞ্জরী। কেন, ঠাকুর, ভয় কাকে ? ত্ৰিবেদী। যারা নতুন দেবতার পূজা চালাতে চায় তারা ভক্তির জোরের চেয়ে গায়ের জোরটা বেশি ব্যবহার করে। আমি ভালোমান্থয, দেবতার চেয়ে এই দেবতাভক্তদের ভয় করি অনেক বেশি। গৌরী। ঠাকুর, আমি বলছিলুম এই-লব হঠাৎ-দেবতার আবার পূজা কিসের। ত্ৰিবেদী। মূঢ়ে, যারা বনেদি দেবতা তাদের এত উগ্রতা নেই। সংসারে হঠাৎদেবতারাই সাংঘাতিক। তাদের পূজা করায় ব্যর্থতা, না-পূজা করায় সর্বনাশ । অতএব ছাড়ো তর্ক, পরো মঞ্জীর, আনো বীণা, গাথো মালা— পঞ্চশরের শরগুলোকে শান দেও গে । 岛 কালিনী। কিন্তু তোমার মন্ত্রটি পেলে কোথা থেকে ঠাকুর। ত্ৰিবেদী। যিনি পূজা প্রচার করছেন পূজার মন্ত্ররচনা তারই। আমি সেটাকে শ্রুতির দ্বারা গ্রহণ ক’রে স্থতির দ্বারা ব্যক্ত করব। দেখে নিয়ে, রাজসভায় শ্রুতিভূষণ বলবেন, সাধু, স্থতিরত্নাকর বলবেন, অহো কিমাশ্চর্যম্ ! মঞ্জরী । ও কী ও, ভাই, বাইরে যে অন্ত্রের ঝঞ্চনি শোনা গেল । কালিনী। হয়তে ওটা সত্যকার লয়। হয়তো উৎসবের একটা কোনো পালার অভ্যাস চলছে।