পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

外歌@泛 ९७S ভবনাথবাবুর কোনো দোষ ছিল না, এবং কিরণ তাহ অবগত ছিল । কিন্তু ভবনাথবাবু অপরাধীর মতো অমৃতপ্ত হইয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “তা বটে। আচ্ছা ও কথাটা আর-একদিন হইবে।” এই বলিয়া নিরুদবিগ্নচিত্তে তিনি র্তাহার নিত্যনিয়মিত অধ্যয়নে নিযুক্ত হইলেন । * আবার আর-একদিন অপরারে আর-একটা গুরুতর কথা পাড়িয়া ভবনাথবাবুকে স্তম্ভিত করিয়া দিতেছি এমন সময় ঠিক মাঝখানে আসিয়া কিরণ কহিল, “মহীন্দ্রবাবু, অবলাকে সাহায্য করিতে হইবে। দেয়ালে লতা চড়াইব, নাগাল পাইতেছি না, আপনাকে এই পেরেকগুলি মারিয়া দিতে হইবে।” আমি উৎফুল্প হইয়া উঠিয়৷ গেলাম, ভবনাথবাবুও প্রফুল্লমনে পড়িতে বলিলেন। - এমনি প্রায় যখনই ভবনাথবাবুর কাছে আমি ভারী কথা পাড়িবার উপক্রম করি, কিরণ একটা-ন-একটা কাজের ছুতা ধরিয়া ভঙ্গ করিয়া দেয় । ইহাতে আমি মনেমনে পুলকিত হইয়া উঠিতাম, আমি বুঝিতাম যে, কিরণের কাছে আমি ধরা পড়িয়াছি ; লে কেমন করিয়া বুঝিতে পারিয়াছে যে, ভবনাথবাবুর সহিত তত্ত্বালোচনা আমার জীবনের চরম স্বখ নহে । বাহাবস্তুর সহিত আমাদের ইন্দ্ৰিয়বোধের সম্বন্ধ নির্ণয় করিতে গিয়া যখন দুরূহ রহস্যরসাতলের মধ্যপথে অবতীর্ণ হইয়াছি এমন সময় কিরণ আসিয়া বলিত, “মহীক্সবাবু, রান্নাঘরের পাশে আমার বেগুনের খেত আপনাকে দেখাইয়া আনিগে, চলুন।” আকাশকে অসীম মনে করা কেবল আমাদের অনুমানমাত্র, আমাদের অভিজ্ঞতা ও কল্পনাশক্তির বাহিরে কোথাও কোনো-একরূপে তাহার সীমা থাকা কিছুই অসম্ভব নহে, ইত্যাকার মন্তব্য প্রকাশ করিতেছি, এমন সময় কিরণ আসিয়া বলিত, “মহীন্দ্রবাবু, দুটো আম পাকিয়াছে, আপনাকে ভাল নামাইয়া ধরিতে হইবে।” -$r কী উদ্ধার, কী মুক্তি ! অকূল সমুদ্রের মাঝখান হইতে এক মুহূর্তে কী স্বন্দর কুলে আলিয়া উঠিতাম। অনন্ত আকাশ ও বাহাবস্তু সম্বন্ধে সংশয়জাল যতই স্কুচ্ছেদ্য জটিল হউক-না কেন, কিরণের বেণ্ডনের খেত বা আমতলা সম্বন্ধে কোনোপ্রকার দুরূহতা ও সন্দেহের লেশমাত্র ছিল না। কাব্যে বা উপন্যাসে তাহা উল্লেখযোগ্য নহে কিন্তু জীবনে তাহা সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপের স্তায় মনোহর। মাটিতে পা ঠেকা যে কী আরাম তাহা সে-ই জানে যে বহুক্ষণ জলের মধ্যে সাতার দিয়াছে। আমি এতদিন কল্পনায় ষে প্রেমসমূদ্র স্বজন করিয়াছিলাম তাহা যদি সত্য হইত তবে সেখানে চিরকাল ষে কী করিয়া ভাসিয়া বেড়াইতাম তাছা বলিতে পারি না। সেখানে আকাশও অসীম,