পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২৩৭ রাজটিকা নবেন্দুশেখরের সহিত অরুণলেখার যখন বিবাহ হইল তখন হোমধূমের অন্তরাল হইতে ভগবান প্রজাপতি ঈষৎ একটু হাস্ত করিলেন। হার, প্রজাপতির পক্ষে যাহা খেলা আমাদের পক্ষে তাহা সকল সময়ে কৌতুকের নহে। নবেন্দুশেখরের পিতা পূর্ণেন্দুশেখর ইংরাজরাজ-সরকারে বিখ্যাত। তিনি এই ভবসমূত্রে কেবলমাত্র দ্রুতবেগে সেলাম-চালনা দ্বারা রায়বাহাদুর পদবীর উত্তঙ্গ মরুকূলে উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন ; আরো দুর্গমতর সম্মানপথের পাথেয় তাহার ছিল, কিন্তু পঞ্চার বৎসর বয়ঃক্রমকালে অনতিদূরবতী রাজখেতাবের কুহেলিকাচ্ছন্ন গিরিচুড়ার প্রতি করুণ লোলুপ দৃষ্টি স্থিরনিবদ্ধ করিয়া এই রাজামুগৃহীত ব্যক্তি অকস্মাৎ খেতাববর্জিত-লোকে গমন করিলেন এবং তাহার বহু-সেলাম-শিথিল গ্রীবাগ্রন্থি শ্মশানশষ্যায় বিশ্রাম লাভ করিল। কিন্তু, বিজ্ঞানে বলে, শক্তির স্থানান্তর ও রূপান্তর অাছে, নাশ নাই– চঞ্চল লক্ষ্মীর অচঞ্চল। সখী সেলামশক্তি পৈতৃক স্কন্ধ হইতে পুত্রের স্কন্ধে অবতীর্ণ হইলেন, এবং নবেন্দুর নবীন মস্তক তরঙ্গতাড়িত কুষ্মাণ্ডের মতো ইংরাজের দ্বারে দ্বারে অবিশ্রাম উঠিতে পড়িতে লাগিল । নিঃসস্তান অবস্থায় ইহার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হইলে যে পরিবারে ইনি দ্বিতীয় দারপরিগ্রহ করিলেন সেখানকার ইতিহাস ভিন্ন প্রকার। সে পরিবারে বড়োভাই প্রমথনাথ পরিচিতবর্গের প্রীতি এবং আত্মীয়বর্গের অাদরের স্থল ছিলেন। বাড়ির লোকে এবং পাড়ার পাচজনে তাহাকে সর্ববিষয়ে অঙ্গকরণস্থল বলিয়া জানিত । * প্রমথনাথ বিষ্ঠায় বি. এ. এবং বুদ্ধিতে বিচক্ষণ ছিলেন, কিন্তু মোট মাহিনী বা জোর কলমের কোনো ধার ধারিতেন না ; মুরুব্বির বলও তাছার বিশেষ ছিল না, কারণ, ইংরাজ তাহাকে ষে পরিমাণ দূরে রাখিত তিনিও তাহাকে সেই পরিমাণ দূরে রাখিয়া চলিতেন। অতএব, গৃহকোণে এবং পরিচিতমণ্ডলীর মধ্যেই প্রমথনাথ জাজল্যমান ছিলেন, দূরস্থ লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিবার কোনো ক্ষমতা তাহার ছিল না। এই প্রমথনাথ একবার বছর তিনেকের জন্য ৰিলাতে ভ্ৰমণ করিয়া আসিয়াছিলেন। সেখানে ইংরাজের সৌজন্তে মুগ্ধ হইয়া ভারতবর্ষের অপমানদুঃখ সমস্ত ভুলিয়া ইংরাজি সাজ পরিয়া দেশে ফিরিয়া আসেন । ভাইবোনের প্রথমটা একটু কুষ্ঠিত হইল, অৰশেষে দুইদিন পরে বলিতে লাগিল, רצולא