পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిలty রবীন্দ্র-রচনাবলী ইংরাজি কাপড়ে দাদাকে যেমন মানায় এমন আর-কাহাকেও না। ইংরাজি বক্সের গৌরবগর্ব পরিবারের অস্তরের মধ্যে ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হইল। প্রমথনাথ বিলাত হইতে মনে ভাবিয়া আসিয়াছিলেন "কী করিয়া ইংরাজের সহিত সমপর্যায় রক্ষা করিয়া চলিতে হয় আমি তাহারই অপূর্ব দৃষ্টান্ত দেখাইব'– নত না হইলে ইংরাজের সহিত মিলন হয় না এ কথা যে বলে সে নিজের হীনতা প্রকাশ করে এবং ইংরাজকেও অন্যায় অপরাধী করিয়া থাকে । প্রমথনাথ বিলাতের বড়ো বড়ো লোকের কাছ হইতে অনেক সাদরপত্র আনিয়া ভারতবর্ষীয় ইংরাজমহলে কিঞ্চিৎ প্রতিপত্তি লাভ করিলেন। এমন-কি মধ্যে মধ্যে সন্ত্রীক ইংরাজের চা ডিনার খেলা এবং হাস্তকৌতুকের কিঞ্চিৎ কিঞ্চিং ভাগ পাইতে লাগিলেন। সৌভাগ্যমদমত্ততায় ক্রমশই তাহার শিরা-উপশিরাগুলি অল্প অল্প রীরী করিতে শুরু করিল। এমন সময়ে একটি নূতন রেলওয়ে লাইন খোলা উপলক্ষে রেলওয়ে কোম্পানির নিমন্ত্রণে ছোটোলাটের সঙ্গে দেশের অনেকগুলি রাজপ্রসাদগর্বিত সম্বাস্তলোকে গাড়ি বোঝাই করিয়া নবলৌহপথে যাত্রা করিলেন । প্রথমনাথও তাহার মধ্যে ছিলেন । ফিরিবার সময় একটা ইংরাজ দরোগ দেশীয় বড়োলোকদিগকে কোনো-এক বিশেষ গাড়ি হইতে অত্যন্ত অপমানিত করিয়া নামাইয়া দিল । ইংরাজবেশধারী প্রমথনাথও মানে মানে নামিয়া পড়িবার উপক্রম করিতেছেন দেখিয়া দারোগী কহিল, “আপনি উঠিতেছেন কেন, আপনি বস্থন-ন৷ ” এই বিশেষ সম্মানে প্রমথনাথ প্রথমটা একটু স্ফীত হইয়া উঠিলেন । কিন্তু, যখন গাড়ি ছাড়িয়া দিল, যখন তৃণহীন কর্ষণধূসর পশ্চিম প্রাস্তরের প্রাস্তসীমা হইতে মান স্বর্ধাস্ত-আভা সকরুণরক্তিম লজ্জার মতো সমস্ত দেশের উপর যেন পরিব্যাপ্ত হইয়া পড়িল এবং যখন তিনি একাকী বসিয়া বাতায়নপথ হইতে অনিমেষনয়নে বন্যস্তরালবাসিনী কুষ্ঠিত বঙ্গভূমির প্রতি নিরীক্ষণ করিয়া ভাবিতে লাগিলেন, তখন ধিক্কারে তাহার হৃদয় বিদীর্ণ হইল এবং দুই চক্ষু দিয়া অগ্নিজালাময়ী অশ্রধারা পড়িতে লাগিল । র্তাহার মনে একটা গল্পের উদয় হইল। একটি গর্দভ রাজপথ দিয়া দেবপ্রতিমার রথ টানিয়া চলিতেছিল, পথিকবর্গ তাহার সম্মুখে ধুলায় লুষ্ঠিত হইয়া প্রতিমাকে প্ৰণাম করিতেছিল এবং মূঢ় গর্দভ আপন মনে ভাবিতেছিলেন, ‘সকলে আমাকেই সম্মান করিতেছে।” প্রমথনাথ মনে মনে কছিলেন, “গর্দভের সহিত আমার এই একটু প্রভেদ