পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ8Հ রবীন্দ্র-রচনাবলী এবং প্রিয়জনের ঔৎসুক্য, রন্ধনের পারিপাট্য এবং রন্ধনীর সেবামাধুর্য, উভয়ের সংযোগে ভোজন ব্যাপারের ওজন রক্ষা করা তাহার পক্ষে কঠিন হইয়া উঠিত । * * আহারের পর সামান্য তাল খেলাতেও নবেন্দু প্রতিভার পরিচয় দিতে পারিত না । চুরি করিত, হাতের কাগজ দেখিত, কাড়াকড়ি বকবিকি বাধাইয়া দিত কিন্তু তবু জিতিতে পারিত না । না জিতিলেও জোর করিয়া তাহার হার অস্বীকার করিত এবং সেজন্য প্রত্যহ তাহার গঞ্ছনার সীমা থাকিত না ; তথাপিও পাষগু আত্মসংশোধনচেষ্টায় সম্পূর্ণ উদাসীন ছিল। কেবল এক বিষয়ে তাহার সংশোধন সম্পূর্ণ হইয়াছিল। সাহেবের লোহাগ যে জীবনের চরম লক্ষ্য, এ কথা সে উপস্থিতমত ভুলিয়া গিয়াছিল। আত্মীয়-স্বজনের শ্রদ্ধা ও স্নেহ যে কত স্বখের ও গৌরবের ইহাই সে সর্বাস্ত:করণে অনুভব করিতেছিল । তাহা ছাড়া, সে যেন এক নূতন আবহাওয়ার মধ্যে পড়িয়া গিয়াছিল। লাবণ্যর স্বামী নীলরতনবাবু আদালতে বড়ো উকিল হইয়াও সাহেবম্ববাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইতেন না বলিয়া অনেক কথা উঠিত। তিনি বলিতেন, “কাজ কী, ভাই ! যদি পাণ্ট। ভদ্রতা না করে তবে আমি যাহা দিলাম তাহা তো কোনোমতেই ফিরাইয়া পাইব না। মরুভূমির বালি ফুটফুটে সাদা বলিয়াই কি তাহাতে বীজ বুনিয়া কোনো স্বখ আছে! ফসল ফিরিয়া পাইলে কালো জমিতেও বীজ বোনা যায়।” নবেন্দুও টানে পড়িয়া দলে ভিড়িয়া গেল তাহার আর পরিণামচিস্তা রছিল না। পৈতৃক এবং স্বকীয় যত্নে পূর্বে জমি যাহা পাট করা ছিল তাহাতেই রায়বাহাদুর খেতাবের সম্ভাবনা আপনিই বাড়িতে লাগিল । ইতিমধ্যে আর নবজলসিঞ্চনের প্রয়োজন রহিল না। নবেন্দু ইংরাজের বিশেষ একটি শখের শহরে এক বহুব্যয়সাধ্য ঘোড়দৌড়স্থান নির্মাণ করিয়া দিয়াছিলেন। হেনকালে কন্‌গ্রেসের সময় নিকটবর্তী হইল। নীলরতনের নিকট চাদা-সংগ্রহের অনুরোধপত্র আসিল । নবেন্দু লাবণ্যর সহিত মনের আনন্দে নিশ্চিন্তমনে তাল খেলিতেছিল। নীলরতন খাতা-হস্তে মধ্যে আসিয়া পড়িয়া কহিল, "একটা সই দিতে হইবে।” পূর্বসংস্কারক্রমে নবেন্দুর মুখ শুকাইয়া গেল। লাবণ্য শশব্যস্ত হইয়া কছিল, “খবরদার, এমন কাজ করিয়ো না, তোমার ঘোড়দৌড়ের মাঠখানা মাটি হইয়া যাইবে।” নবেন্দু আস্ফালন করিয়া কছিল, “সেই ভাবনায় আমার রাত্রে ঘুম হয় না।”