পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २86ः লাবণ্য কহিল, “তা কেন । আমি ভাবিতেছিলাম, তোমার অনেক আশাভরসার সেই ঘোড়দৌড়ের মাঠথানি বাচাইবার চেষ্টা এখনো ছাড় নাই— যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ অাশ * নবেন্দু কহিল, “আমি বুঝি সেইজন্য লিখিতে চাহি না!” অত্যস্ত রাগিয়া দোয়াতকলম লইয়া বলিল। কিন্তু, লেখার মধ্যে রাগের রক্তিমা বড়ো প্রকাশ পাইল না, কাজেই লাবণ্য ও নীলরতনকে সংশোধনের ভার লইতে হইল। যেন লুচিভাজার পালা পড়িল ; নবেন্দু যেটা জলে ও ঘিয়ে ঠাণ্ড ঠাণ্ড নরম নরম করিয়া এবং চাপিয়া যথাসাধ্য চেপটা করিয়া বেলিয়া দেয় তাহার দুই সহকারী তৎক্ষণাৎ সেটাকে ভাজিয়া কড়া ও গরম করিয়া ফুলাইয়া ফুলাইয়া তোলে। লেখা হইল যে, আত্মীয় যখন শক্র হয় তখন বহিঃশত্রু অপেক্ষা ভয়ংকর হইয়া উঠে। পাঠান অথবা রাশিয়ান ভারত-গবর্মেন্টের তেমন শত্রু নহে যেমন শক্র গর্বোন্ধত অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানসম্প্রদায়। গবর্মেন্টের সহিত প্রজাসাধারণের নিরাপদ সৌহার্দ্যবন্ধনের তাহারাই দুর্ভেদ্য অন্তরায় । কনগ্রেস রাজা ও প্রজার মাঝখানে স্থায়ী সম্ভাবসাধনের যে প্রশস্ত রাজপথ খুলিয়াছে, অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান কাগজগুলো ঠিক তাহার মধ্যস্থল জুড়িয়া একেবারে কণ্টকিত হইয়া রহিয়াছে। ইত্যাদি। নবেন্দুর ভিতরে ভিতরে ভয়-ভয় করিতে লাগিল অথচ লেখাটা বড়ো সরেস হইয়াছে’ মনে করিয়া, রহিয়া রহিয়া একটু আনন্দও হইতে লাগিল । এমন স্বন্দর রচনা তাহার সাধ্যাতীত ছিল । ইহার পর কিছুদিন ধরিয়া নানা কাগজে বিবাদবিলম্বাদ-বাদপ্রতিবাদে নবেন্দুর চাদ এবং কনগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা লইয়া দশ দিকে ঢাক বাজিতে লাগিল। নবেন্দু এক্ষণে মরিয়া হইয়া কথায় বার্তায় শুালীসমাজে অত্যন্ত নিৰ্ভীক দেশহিতৈষী হইয়া উঠিল । লাবণ্য মনে মনে হাসিয়া কহিল, এখনো তোমার অগ্নিপরীক্ষা বাকি আছে।” একদিন প্রাতঃকালে নবেন্দু স্বানের পূর্বে বক্ষস্থল তৈলাক্ত করিয়া পৃষ্ঠদেশের দুর্গম অংশগুলিতে তৈলসঞ্চার করিবার কৌশল অবলম্বন করিতেছেন, এমন সময় বেহার এক কার্ড হাতে করিয়া তাহাকে দিল, তাহাতে স্বয়ং ম্যাজিস্ট্রেটের নাম আঁকা। লাবণ্য সহান্তকুতূহলী চক্ষে আড়াল হইতে কৌতুক দেখিতেছিল। তৈললাঞ্চিত কলেবরে তো ম্যাজিস্ট্রেটের সহিত সাক্ষাৎ করা যায় না— নবেন্দু ভাজিবার পূর্বে মলল-মাখা কই-মৎস্তের মতো বৃথা ব্যতিব্যস্ত হইতে লাগিলেন। তাড়াতাড়ি চকিতের মধ্যে স্বান করিয়া কোনোমতে কাপড় পরিয়া উর্ধ্বশ্বালে