পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૯૦ রবীন্দ্র-রচনাবলী "কী করা হয় ।” । “ব্যাবসা করিয়া থাকি ৷” "কী ব্যাবসা ।” “হরীতকী, রেশমের গুটি এবং কাঠের ব্যবসা।” “কী নাম * ঈষৎ থামিয়া একটা নাম বলিলাম। কিন্তু সে আমার নিজের নাম নহে । ভদ্রলোকের কৌতুহলনিবৃত্তি হইল না । পুনরায় প্রশ্ন হইল, “এখানে কী করিতে আগমন ।” আমি কছিলাম, "বায়ুপরিবর্তন।” লোকটি কিছু আশ্চর্ষ হইল। কহিল, “মহাশয়, আজ প্রায় ছয়বৎসর ধরিয়া এখানকার বায়ু এবং তাহার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যহ গড়ে পনেরো গ্রেন করিয়া কুইনাইন খাইতেছি কিন্তু কিছু তো ফল পাই নাই ।” আমি কহিলাম, “এ কথা মানিতেই হইবে, রাচি হইতে এখানে বায়ুর যথেষ্ট পরিবর্তন দেখা যাইবে।” তিনি কছিলেন, “আজ্ঞা হা, যথেষ্ট । এখানে কোথায় বাসা করিবেন ।” অামি ঘাটের উপরকার জীর্ণবাড়ি দেখাইয়া কহিলাম, “এই বাড়িতে।” বোধ করি লোকটির মনে সন্দেহ হইল, আমি এই পোড়ো বাড়িতে কোনো গুপ্তধনের সন্ধান পাইয়াছি। কিন্তু এ সম্বন্ধে আর কোনো তর্ক তুলিলেন না, কেবল আজ পনেরো বৎসর পূর্বে এই অভিশাপগ্ৰস্ত বাড়িতে যে ঘটনাটি ঘটিয়াছিল তাহারই বিস্তারিত বর্ণনা করিলেন । লোকটি এখানকার ইস্কুলমাস্টার । তাহার ক্ষুধা ও রোগ শীর্ণ মুখে মস্ত একটা টাকের নীচে একজোড়া বড়ো বড়ো চক্ষু আপন কোটরের ভিতর হইতে অস্বাভাবিক উজ্জলতায় জলিতেছিল। র্তাহাকে দেখিয়া ইংরাজ-কবি কোলরিজের স্বই প্রাচীন নাবিকের কথা আমার মনে পড়িল । মাঝি নমাজ পড়া সমাধা করিয়া রন্ধনকার্ধে মন দিয়াছে। সন্ধ্যার শেষ অভিাটুকু মিলাইয়া আলিয়া ঘাটের উপরকার জনশূন্ত অন্ধকার বাড়ি আপন পূর্বাবস্থার প্রকাও প্রেতমূর্তির মতো নিস্তন্ধ দাড়াইয়া রহিল। ইস্কুলমাস্টার কহিলেন— ایم আমি এই গ্রামে আসার প্রায় দশ বৎসর পূর্বে এই বাড়িতে ফণিভূষণ সাহা বাস