পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*అత్రి রবীন্দ্র-রচনাবলী আমার স্বামী কহিলেন, “ভালো ভাক্তার আসিয়া আর নূতন চিকিৎস কী করিবে। ওষুধপত্র তো সব জানাই অাছে।” দাদা কিছু রাগিয়া কহিলেন, “তবে তো তোমার সঙ্গে তোমাদের কলেজের বড়োসাহেবের কোনো প্রভেদ নাই।” স্বামী বলিলেন, “আইন পড়িতেছ, ডাক্তারির তুমি কী বোঝ। তুমি যখন বিবাহ করিবে তখন তোমার স্ত্রীর সম্পত্তি লইয়া যদি কখনো মকদমা বাধে তুমি কি আমার পরামর্শমত চলিবে ।” আমি মনে মনে ভাবিতেছিলাম, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হইলে উলুখড়েরই বিপদ সবচেয়ে বেশি। স্বামীর সঙ্গে বিবাদ বাধিল দাদার, কিন্তু দুইপক্ষ হইতে বাজিতেছে আমাকেই । আবার ভাবিলাম, দাদারা যখন আমাকে দানই করিয়াছেন তখন আমার সম্বন্ধে কর্তব্য লইয়া এ-সমস্ত ভাগাভাগি কেন । আমার স্বখদুঃখ, আমার রোগ ও আরোগ্য, সে তো সমস্তই আমার স্বামীর । 隨 সে দিন আমার এই এক সামান্ত চোখের চিকিৎসা লইয়া দাদার সঙ্গে আমার স্বামীর যেন একটু মনাস্তর হইয়া গেল । সহজেই আমার চোখ দিয়া জল পড়িতেছিল, আমার জলের ধারা আরো বাড়িয়া উঠিল ; তাহার প্রকৃত কারণ আমার স্বামী কিম্বা দাদা কেহই তখন বুঝিলেন না। অামার স্বামী কণলেজে গেলে বিকালবেলায় হঠাৎ দাদা এক ডাক্তার লইয়া আসিয়া উপস্থিত। ডাক্তার পরীক্ষা করিয়া কহিল, সাবধানে না থাকিলে পীড়া গুরুতর হইবার সম্ভাবনা আছে। এই বলিয়া কী-সমস্ত ওষুধ লিখিয়া দিল, দাদা তখনই তাহ আনাইতে পাঠাইলেন । ডাক্তার চলিয়া গেলে আমি দাদাকে বলিলাম, "দাদা, আপনার পায়ে পড়ি, আমার যে চিকিৎসা চলিতেছে তাহাতে কোনোরূপ ব্যাঘাত ঘটাইবেন না।” আমি শিশুকাল হইতে দাদাকে খুব ভয় করিতাম ; তাহাকে যে মুখ ফুটিয়া এমন করিয়া কিছু বলিতে পারিব, ইহা আমার পক্ষে এক আশ্চর্ষ ঘটনা। কিন্তু, আমি বেশ বুঝিয়াছিলাম, আমার স্বামীকে লুকাইয়া দাদা আমার ষে চিকিৎসার ব্যবস্থা করিতেছেন তাহাতে আমার অশুভ বৈ শুভ নাই । দাদাও আমার প্রগস্ভতায় বোধ করি কিছু আশ্চর্ষ হইলেন। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া ভাবিয়া অবশেষে বলিলেন, “আচ্ছা, আমি আর ডাক্তার জানিব না, কিন্তু যে ওষুধটা আসিবে তাহ বিধিমতে সেবন করিয়া দেখিল।” ওষুধ আসিলে পর আমাকে তাহ ব্যবহারের নিয়ম বুঝাইয়া দিয়া চলিয়া গেলেন। স্বামী কলেজ হইতে আলিবার