পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o রবীন্দ্র-রচনাবলী צס\ এই কবিতাটির যুক্তি ও আধ্যাত্মিক রসমাধুধের বিচারভার আধুনিককালের বস্তুতান্ত্রিক উকিল রসিকদের উপর অর্পণ করা গেল। তা ছাড়া লোকশিক্ষায় এর প্রয়োজনীয়তার তর্ক তোলবার অধিকারীও আমি নই। আমি ছন্দের দিক দিয়ে বলছি, এর প্রত্যেক পদভাগে একটি দীর্ঘ ও দুইটি হ্রস্ব মাত্রা, সেই দীর্ঘত্বশ্বের ওঠাপড়ার পর্যায়ই হচ্ছে এই ছন্দের প্রকৃতি। বাংলায় স্বরের দীর্ঘহস্বতা নাই কিম্বা নাই বললেই হয়, এবং যুক্তব্যঞ্জনকে সাধু বাংলা কোনো গৌরব দেয় না, অযুক্তের সঙ্গে একই বাটখারায় তার ওজন চলে। অতএব মাত্রাসংখ্যা মিলিয়ে ওই লোহার স্তর যদি বাংলা ছন্দে লেখা যায় তা হলে তার দশা হয় এই— দেখ দেখ মনোহর লোহার গা- ড়িতে চড়ি 闸 লোহাপথে কত শত মানুষ চ- লিছে দেখিতে দে- খিতে তারা যোজন যো- জন পথ অনায়ালে তরে যায় টিকিট কি- নিয়া । যেসব মা- মুষ আছে অনেক দূ- রের দেশে, লোহা দিয়ে গড়া তার রয়েছে ব- লিয়া, স্বদূর ব- ধুর সাথে কত যে ম- নের স্বখে কথা চালা- চালি করে নিমেষে নি- মেষে । বাংলায় আর সবই রইল— মাত্রাও রইল, আর সম্ভবত আধ্যাত্মিকতারও হানি হয় নি, কেননা ভক্তির টিকিট থাকলে লোহার গাড়ি যে কঠিন লোহার পথও তরিয়ে দেয় এবং বঁধুর সঙ্গে যতই দূরত্ব থাক স্বয়ং লোহার তারে তাদের কথা চালাচালি হতে পারে এ ভাবটা বাংলাতেও প্রকাশ পাচ্ছে— কিন্তু মূল ছন্দের প্রকৃতিটা বাংলায় রক্ষা পায় নি । এ কেমন, যেমন ঢেউ-খেলানো দেশের জমির পরিমাণ সমতল দেশে জরিপের দ্বারা মিলিয়ে নেওয়া । তাতে জমি পাওয়া গেল কিন্তু ঢেউ পাওয়া গেল না। অথচ ঢেউট ছন্দের একটা প্রধান জিনিস । সমতল বাংলা আপন কাব্যের ভাষাকে সমতল করে দিয়েছে। এ হচ্ছে কাজকে সহজ করবার একটা কৃত্রিম বাধা নিয়ম । আমরা যখন বলি থার্ড ক্লাসের ছেলে, তখন মনে ধরে নিই যেন সব ছেলেই সমান মাত্রার। কিন্তু আসলে থার্ড ক্লাসের আদর্শকে যদি একটা সরল রেখ বলে ধরে নিই তবে কোনো ছেলে সেই রেখার উপরে চড়ে কেউ-বা তার নীচে নামে । ভালো শিক্ষাপ্রণালী তাকেই বলে যাতে প্রত্যেক ছেলেকে তার নিজের স্বতন্ত্ৰ বুদ্ধি ও শক্তির মাত্রা অনুসারে ব্যবহার করা যায়, থার্ড ক্লাসের একটা কাল্পনিক মাত্রা ক্লাসের সকল ছেলের উপরে সমানভাবে আরোপ না করা যায়। কিন্তু কাজ