পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छ्ब्ल 4 לס আজকের দিনে এমন কথা অতি অর্বাচনকেও বলা অনাবশ্বক যে, ওই ত্রৈমাত্রিক ভূমিকার ছন্দকে নীচের মতে রূপান্তরিত করা অপরাধ— ঐ যে তপনের রশ্মির কম্পন এই মস্তিক্ষেতে লাগে, সেই সম্মিলনে বিদ্যুৎ-ঝম্পন বিশ্বমূর্তি হয়ে জাগে । অথচ সে দিন বৃত্রসংহারে এইজাতীয় ছন্দে হেমচন্দ্র ঐন্দ্রিলার রূপবর্ণনায় অসংকোচে লিখতে পেরেছিলেন— বদনমগুলে ভাসিছে ব্রীড়া । বেশ মনে আছে, সে দিন স্থানবিশেষে ঐ শব্দের বানান নিয়ে আমাকে ভাবতে হয়েছিল। প্রবোধচন্দ্র নিশ্চয় বলবেন, “ভেবে যা হয় একটা স্থির কুরে ফেলাই ভালো ছিল । কোথাও বা ‘ঐ, কোথাও বা ‘ওই’ বানান কেন।” তার উত্তর এই, বাংলার স্বরের হ্রস্বদীর্ঘতা সংস্কৃতের মতো বাধা নিয়ম মানে না, ওর মধ্যে অতি সহজেই বিকল্প চলে। “ও—ই দেখো, খোকা ফাউণ্টেন পেন মুখে পুরেছে", এখানে দীর্ঘ ওকারে কেউ দোষ ধরবে না। আবার যদি বলি "ঐ দেখো, ফাউণ্টেন পেনট খেয়ে ফেললে বুঝি", তখন হ্রস্ব ঐকার নিয়ে বচলা করবার লোক মিলবে না। বাংলা উচ্চারণে স্বরের ধ্বনিতে টান দিয়ে অতি সহজেই বাড়ানো-কমানো যায় বলেই ছন্দে তার গৌরব বা লাঘব নিয়ে আজ পর্যন্ত দলাদলি হয় নি। এ-সব কথা দৃষ্টান্ত না দিলে স্পষ্ট হয় না, তাই দৃষ্টাস্ত তৈরি করতে হল। মনে পড়ে দুইজনে জুই তুলে বাল্যে নিরালায় বনছায় গেথেছিছু মাল্যে। দোহার তরুণ প্রাণ বেঁধে দিল গন্ধে আলোয়-আঁধারে-মেশা নিভৃত আননে ॥ এখানে দুই’ ‘দুই’ আপন আপন উকারকে দীর্ঘ করে দুই সিলেবল-এর টিকিট পেয়েছে, কান তাদের সাধুতায় সন্দেহ করলে না, দ্বার ছেড়ে দিলে। উলটো দৃষ্টান্ত দেখাই । এই যে এল সেই আমারি স্বপ্নে দেখা রূপ, কই দেউলে দেউটি দিলি, কই জালালি ধূপ। যায় যদি রে যাক-না ফিরে, চাই নে তারে রাখি, সব গেলেও হায় রে তবু স্বপ্ন রবে বাকি ।