পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छ्ञ 漫 9) শব্দটাকে দুই মাত্রায় গণ্য করতে আপত্তি করি নি বলে তিনি দ্বিধা বোধ করছেন। তর্ক না করে দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক । একটি কথার লাগি তিনটি রজনী জাগি, একটুও নাহি মেলে সাড়া । সখীরা যখন জোটে মুখে তব বস্তা ছোটে, গোলমালে তোলপাড় পাড়া । ‘একটি ‘তিনটি একটু’ শব্দগুলি হলস্তমধ্য, ‘গোলমাল’ তোলপাড়াও সেই জাতের। অথচ হসন্তে ধ্বনিলাঘবতার অভিযোগে ওদের মাত্রা জরিমান দিতে হয় নি। তিন মাত্রা ও চার মাত্রার গৌরবেই রয়ে গেল । কেউ কেউ বলেন, কেবলমাত্র অক্ষরগণনার দোহাই দিয়েই এরা মান বাচিয়েছে, অর্থাৎ যদি যুক্ত অক্ষরের ছাদে লেখা যেত তা হলেই ছন্দে ধ্বনির কমতি ধরা পড়ত। আমার বক্তব্য এই যে, চোখ দিয়ে ছন্দ পড়া আর বাইসিক্ল-এর চাকা দিয়ে হামাগুড়ি দেওয়া একই কথা, ওটা হবার জো নেই। বিরুদ্ধ দৃষ্টাস্ত দিলে কথাটা বোঝা যাবে। টোটুকা এই মুষ্টিযোগ লটুকানের ছাল, সিটুকে মুখ খাবি, জর আটকে যাবে কাল। বলে রাখা ভালো এটা ভিষক-ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন নয়, সাহিত্য-ডাক্তারের বানানো ছড়া, ছন্দ সম্বন্ধে মতসংশয় নিবারণের উদ্দেশ্যে ; এর থেকে অন্য কোনো রোগের প্রতিকার কেউ যেন আশা না করেন । আরো একটা— একটি কথা শুনিবারে তিনটে রাত্রি মাটি, এর পরে ঝগড়া হবে, শেষে দাত কপাটি। একটি কথা শোনে, মনে খটুকণ নাহি রেখে, টাটুকা মাছ জুটুল না তো, শুটকি দেখে চেখে । শেষের তিনটি ছড়ায় অক্ষর গুনতি করতে গেলে দৃশুত পয়ারের সীমা ছাড়িয়ে যায়, কিন্তু তাই বলেই ষে পয়ার ছন্দের নির্দিষ্ট ধ্বনি বেড়ে গেল তা নয়। আপাতত মনে হয়, এটা যথেচ্ছাচার। কিন্তু হিসাব করে দেখলেই দেখা যাবে ছন্দের নীতি নষ্ট করা হয় নি। কেননা, তার জো নেই। এ তে রাজত্ব করা নয় কবিত্ব করা, এখানে লক্ষ্য হল মনোরঞ্জন ; থামক একটা জবরদস্তির আইন জারি করে তার পরে পাহারাওয়ালা লাগিয়ে দেওয়া, ব্যাপারটা এত সহজ নয়। ধ্বনির রাজ্যে গোস্বার্তমি করে কেউ জিতে যাবে এমন সাধ্য আছে কার। চব্বিশ ঘণ্টা কান রয়েছে সতর্ক।